প্রশ্ন: কেউ কোন পূর্ব চুক্তি ছাড়া কারো কাছে কিছু টাকা ধার নিয়ে পরবর্তীতে দেয়ার সময় কিছু টাকা বেশি করে দিলে সেটা কি সুদ বলে গণ্য হবে?
উত্তর:
ঋণ দেওয়ার পূর্বে যদি ঋণ গ্রহীতার নিকট অতিরিক্ত কোনও ফায়দা নেয়ার চুক্তি বা শর্তারোপ করা হয় তাহলে তা সুদ হবে। অন্যথায় সুদ হবে না।
সুতরাং ঋণ গ্রহীতা যদি ঋণ পরিশোধের সময় স্বেচ্ছায় খুশি হয়ে অতিরিক্ত কিছু দেয় তাহলে তা গ্রহণ করায় কোন আপত্তি নেই। এটি সুদের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং ঋণ পরিশোধের সময় অতিরিক্ত কিছু দেওয়া উত্তম। এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিয়ম ছিল, তিনি যা ঋণ নিতেন পরিশোধ করার সময় তার চেয়ে বেশি দিতেন। তিনি আরও বলেছেন, “নিশ্চয় সবচেয়ে উত্তম মানুষ সেই ব্যক্তি যে সুন্দরতম পন্থায় পরিশোধ করে।”
হাদিসটি নিম্নরূপ:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَجُلاً أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَتَقَاضَاهُ بَعِيرًا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَعْطُوهُ فَقَالُوا مَا نَجِدُ إِلاَّ سِنًّا أَفْضَلَ مِنْ سِنِّهِ فَقَالَ الرَّجُلُ أَوْفَيْتَنِي أَوْفَاكَ اللهُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَعْطُوهُ فَإِنَّ مِنْ خِيَارِ النَّاسِ أَحْسَنَهُمْ قَضَاءً
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত যে, একজন লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট তার (প্রাপ্য) উটের তাগাদা দিতে আসে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের বললেন, “তাকে একটি উট দিয়ে দাও।”
তাঁরা বললেন, তার চেয়ে উত্তম বয়সের উট ছাড়া তো পাচ্ছি না।
লোকটি বলল, আপনি আমাকে পূর্ণ হক দিয়েছেন, আল্লাহ আপনাকে যেন পূর্ণ হক দেন।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে সেটি দিয়ে দাও। কেননা, মানুষের মধ্যে সেই উত্তম, যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে।”
[সহিহ বুখারি (তাওহীদ পাবলিকেশন), ৪৩/ ঋণ গ্রহণ, ঋণ পরিশোধ, নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও দেউলিয়া ঘোষণা, পরিচ্ছেদ: ৪৩/৬. কম বয়সের উটের বিনিময়ে বেশী বয়সের উট দেয়া যায় কি?]
◈◈ শাইখ বিন বায রহ. কে প্রশ্ন করা হয়, একব্যক্তি কাউকে অর্থ (ঋণ) প্রদান করল কিন্তু তার সাথে অতিরিক্ত অর্থ প্রদানের শর্ত বা চুক্তি না থাকা স্বত্বেও ঋণগ্রহীতা স্বেচ্ছায় খুশি মনে এক হাজার রিয়াল অতিরিক্ত সহ তা ফেরত দিলো? এ অতিরিক্ত অর্থটা সুদ হিসাবে বিবেচিত হবে?
তিনি উত্তরে বলেন,
إذا رد المبلغ بدون شرط ولا تواطؤ على الزيادة فلا بأس
“যদি সে অতিরিক্ত অর্থ দেয়ার পূর্বশর্ত বা চুক্তি ছাড়াই ফেরত দেয় তাহলে তাতে কোনও দোষ নেই।” [শাইখের ওয়েব সাইট থেকে নেয়া]
নি:সন্দেহে ঋণ দেয়ার পর অতিরিক্ত কিছু অর্থ সহ ফেরত দেয়া বা কোনও উপহার-সামগ্রী প্রদান করা উপকারের ন্যূনতম প্রতিদান, কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ এবং উন্নত চরিত্রের প্রমাণ। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা ঘটে তা দু:খ জনক। ঋণ দাতাকে যথাসময়ে বিনা চাওয়ায় উত্তম পন্থায় তা ফেরত তো দেয়া হয়ই না বরং উল্টো ঋণদাতাকে বারবার ঋণ ফেরত দেয়ার জন্য অনুরোধ করতে হয়। অনেক সময় উল্টো কটু কথা ও অপমানের শিকার হতে হয়। ফলে দুজনের মাঝে সৃষ্টি হয় তিক্ততা ও সম্পর্কের অবনতি। অথচ উচিত ছিল, যথাসময়ে তা ফেরত দেয়ার পর ঋণ দিয়ে সাহায্য করার জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং সম্ভব হলে উপহার হিসেবে অতিরিক্ত কিছু দেয়া। (আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন।)
মোটকথা, কোনও ব্যক্তিকে ঋণ দেওয়ার পর সে তা ফেরত দেওয়ার সময় যদি স্বেচ্ছায় (ঋণদাতা পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও তলব, আকারে-ইঙ্গিতে প্রত্যাশা ব্যক্ত কিংবা চুক্তি না থাকা সত্ত্বেও) অতিরিক্ত কিছু টাকা দেয় তাহলে তা গ্রহণ করতে কোন আপত্তি নেই বরং কিছু অতিরিক্ত সহ ঋণ পরিশোধ করাই উত্তম।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬◍❂◍▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।