পিতা-মাতা সন্তানের উপর বদ দুআ করার পর সন্তানের ক্ষমা চাওয়ার প্রেক্ষিতে যদি তারা তাকে ক্ষমা করে দেয় তারপরও কি তাদের বদদুআ কার্যকর হবে? এ ক্ষেত্রে তাদের কী করণীয়?
▬▬▬✪✪✪▬▬▬
প্রশ্ন: কোন কারণে যদি পিতামাতা রাগান্বিত হয়ে সন্তানের উপর বদ দুআ করে কিন্তু তারপরে সন্তান তাদের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তারা তাকে ক্ষমাও করে দেয় তাহলেও কি তাদের বদ দুআ কার্যকর হয়ে যাবে? এ ক্ষেত্রে পিতামাতা এবং সন্তানের কী করণীয়?
উত্তর:
ইসলামের দৃষ্টিতে পিতামাতার মর্যাদা অপরিসীম। হাদিসে এসেছে, তাদের খুশিতে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা খুশি হন এবং তাদের অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন এবং সন্তানের ব্যাপারে তাদের দুআ নিশ্চিতভাবে কবুল হয়। যেমন আবূ হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“ ثَلاَثُ دَعَوَاتٍ
يُسْتَجَابُ لَهُنَّ لاَ شَكَّ فِيهِنَّ دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ لِوَلَدِهِ
তিন ব্যক্তির দুআ’ কবুল হয়। এতে কোন সন্দেহ নাই। মজলুম (নির্যাতিত) এর দুআ’, মুসাফিরের দুআ’ ও সন্তানের জন্য পিতার দুআ’।
[সুনানে তিরমিযী ১৯০৫, ৩৪৪৮, ১৫৩৬, মুসনাদে আহমাদ ৭৪৫৮, ৮৩৭৫, ৯৮৪০, ১০৩৩০, ১০৩৯২। সিলসিলা সহীহাহ ৫৯৬, সহীহ আবূ দাউদ ১৩৭৪]
সুতরাং তাদের সুদুআ যেমন সন্তানের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে তেমনি তাদের বদ দুআ তার জীবনকে করে দিতে পারে লণ্ডভণ্ড। অত:এব এ ব্যাপারে প্রতিটি সন্তানের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা অপরিহার্য।
যাহোক, পিতামাতা যদি সন্তানের উপর বদদোয়া করে তারপরে যদি সন্তান তাদের কাছে ক্ষমা চায় এবং তারা তাকে ক্ষমাও করে দেয় তাহলে এখন পিতামাতার করণীয় হল, তারা আল্লাহর নিকট এ দুআ করবে যে, তিনি যেন সন্তানের প্রতি তাদের বদদোয়া কার্যকরী না করেন।
অন্যথায় তাদের বদ দুআ সন্তানের উপর পতিত হতে পারে। কেননা, পিতামাতা সন্তানের আচরণে কষ্ট পেয়ে বদদুআ করেছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে সন্তান ক্ষমা প্রার্থনা করায় তাদের মনের কষ্ট দুর হয়েছে বটে তবে তারা এ কষ্ট নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে নি বরং মহান আল্লাহর নিকট সে সন্তানের জন্য অভিসম্পাত করেছে বা বদদোয়া করেছে। এখন বাবা-মা ক্ষমা করার পরও আল্লাহর পক্ষ থেকে সন্তানের উপর উক্ত অভিসম্পাত বর্ষিত হতে পারে।
তাই এখন উচিৎ, পিতামাতা সন্তানের জন্য নেক দুআ করবেন, যেন আল্লাহ তাআলা তাদের সন্তানের উপর উক্ত বদদোয়া কার্যকরী না করেন এবং আসন্ন বিপদাপদ হতে রক্ষা করেন।
আর সন্তানেরও উচিৎ, বাবামার নিকট ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি মহান আল্লাহর নিকট তওবা-ইস্তিগফার করা এবং অধিক পরিমাণে নেকির কাজ করা। সেই সাথে পিতামাতার সেবা করে তাদের সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা। তাহলে আল্লাহ তায়ালাও তার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন এবং বিপদ-মুসিবত থেকে রক্ষা করবেন ইনশাআল্লাহ।
▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।।