প্রশ্ন: কারো বাবা সারাজীবন সুদি ব্যাংকে চাকরি করে ছেলে মেয়েদের ঐ বেতনের টাকা দিয়ে লালন পালন করেছেন। এখন তিনি অবসরপ্রাপ্ত। পেনশনের টাকা পান। এক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের কি গোনাহ হবে? বর্তমানে বাবার পেনশনের টাকায় কেনা খাবার খেতে বা পোশাক পড়তে পারবে কিনা? এতে কি ছেলে মেয়েরা গোনাহের ভাগীদার হবে? নিজের বাবাকে এই গোনাহ থেকে বাঁচাতে সন্তান হিসাবে কি করণীয় হবে?
উত্তর: বাবার জন্য ফরজ হচ্ছে, হালাল পন্থায় তার স্ত্রী-পরিবারের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা। তিনি তা না করলে তিনি গুনাগার হবেন এবং কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাঠগড়ায় তাকে জবাবদিহি করতে হবে; স্ত্রী বা সন্তানকে নয়।
সুতরাং পিতা যদি সুদি ব্যাংকে চাকরি করে অর্থ উপার্জন করে অথবা ব্যাংক থেকে অবসর গ্রহণের পরে সেখান থেকে প্রাপ্ত পেনশনের অর্থ দ্বারা সংসার পরিচালনা করে তাহলে এর দায়-দায়িত্ব তার উপরে বর্তাবে; স্ত্রী পরিবার ও সন্তান-সন্ততির উপরে নয়। কিন্তু তারা অন্তর থেকে হারাম কে ঘৃণা করবে এবং সম্ভব হলে তাকে হারাম উপার্জন পরিত্যাগ করার অনুরোধ জানাবে।
প্রশ্ন: শাইখ ইবনে উসাইমিন রাহ. কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: যদি কেউ ব্যক্তি যদি জানতে পারে যে, তার বাবার সম্পত্তির উৎস হারাম, তাহলে কি সে তার বাবার খাবার খাবে? আর যদি সে তার বাবার খাবার না খায়, তাহলে কি তা পিতার অবাধ্যতা হিসেবে গণ্য হবে?
উত্তর:
“الرجل الذي علم أن مال أبيه من الحرام إن كان حراماً بعينه، بمعنى: أنه يعلم أن أباه سرق هذا المال من شخص فلا يجوز أن يأكله، لو علمت أن أباك سرق هذه الشاة وذبحها فلا تأكل، ولا تُجِبْ دعوته ، أما إذا كان الحرام من كسبه يعني: أنه هو يرابي أو يعامل بالغش أو ما يشابه ذلك ، فكل ، والإثم عليه هو .
، ودليل هذا: أن النبي صلى الله عليه وعلى آله وسلم أكل من مال اليهود وهم معروفون بأخذ الربا وأكل السحت، أهدت إليه يهودية شاةً في خيبر مسمومة ليموت ، ولكن الله عصمه من ذلك إلى أجلٍ مسمى . ودعاه يهودي إلى خبز شعير وإهالة سنخة (أي : دهن متغير الرائحة) فأجابه وأكل ، واشترى من يهودي طعاماً لأهله وأكله هو وأهله ، فليأكل والإثم على والده ” انتهى من “لقاء الباب المفتوح” (188/13) .
“যে ব্যক্তি জানতে পারবে যে, তার বাবার সম্পত্তি হারাম, যদি সে মূল সম্পদটাই হারাম হয় অর্থাৎ যদি সে নিশ্চিতভাবে জানে যে তার বাবা কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে চুরি করেছে, তাহলে সে তা খাবে না। যেমন: যদি তুমি জানতে পারো যে, তোমার বাবা কোনও ছাগল চুরি করেছে এবং তা জবাই করেছে, তাহলে তুমি তা খাবে না এবং তার দাওয়াতেও যাবে না। কিন্তু যদি হারাম উপার্জন তার ব্যবসায়িক কাজ থেকে আসে, অর্থাৎ সে সুদ খায়, প্রতারণা করে বা অনুরূপ অন্য কোনও কাজ করে, তাহলে তুমি খেতে পারো। এই ক্ষেত্রে গুনাহ তার উপরই থাকবে।
এর প্রমাণ হল, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই/হুদিদের সম্পত্তি থেকে খেয়েছেন, যারা সুদ খাওয়া এবং হারাম উপার্জনের জন্য পরিচিত ছিল। এক ই/হুদি নারী নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিষাক্ত খাবার দিয়েছিল কিন্তু আল্লাহ তাকে রক্ষা করেছিলেন। এক ই/হুদি তাকে জবের রুটি এবং রুটির সাথে মাখিয়ে খাওয়ার জন্য দ্রবীভূত মাখন বা চর্বি খাওয়ার জন্য দাওয়াত করেছিল। তিনি তা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি এক ই/হুদি থেকে তার পরিবারের জন্য খাবার কিনেছিলেন এবং নিজেও খেয়েছিলেন। অতএব, তুমি খেতে পারো। গুনাহ তোমার বাবার উপরই থাকবে।” [উৎস: বাবুল মাফতুহ, ১৮৮/১৩]
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার,
সৌদি আরব।