প্রশ্ন: বাবা বা মা যদি সন্তানকে বিনা দোষে অশ্লীল ভাষায় গালি দেয় তাহলে এ ব্যাপারে ইসলাম কী বলে? এ অবস্থায় সন্তানের করণীয় কী?
উত্তর:
মুসলিম মানেই উন্নত চরিত্রবান, নম্র, ভদ্র, শালীন ও ব্যক্তিত্ব বান মানুষ। মুমিন ব্যক্তি কখনোই অশালীন, নোংরা ও অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করতে পারে না। এটা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। চাই সে বাবা, মা, সন্তান, স্বামী, স্ত্রী, ভাই, বোন, আত্মীয়, অনাত্মীয়, শিক্ষক, ছাত্র, আলেম, নন আলেম, বাসের ড্রাইবার, হেল্পার, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ ইত্যাদি যেই হোক না কেন। তাই তো ইসলামে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করাকে কবিরা গুনাহ, ফসেকি কাজ এবং মুনাফেকির স্বভাব হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
◍ হাদিসে এসেছে:
عن عبد الله بن عمرو رضي الله عنهما أن النبي صلى الله عليه وسلم قال: أربع من كن فيه كان منافقا خالصا ومن كانت فيه خصلة منهن كانت فيه خصلة من النفاق حتى يدعها : إذا ائتمن خان، و إذا حدث كذب، وإذا عاهد غدر، و إذا خاصم فجر. (متفق عليه)
‘আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যার মধ্যে চারটি দোষ থাকবে সে নির্ভেজাল মুনাফিকে পরিণত হবে আর যার মধ্যে সেগুলোর মধ্যে থেকে একটি থাকবে সে তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে একটি মুনাফেকির নিদর্শন বিদ্যমান থাকবে। সেগুলো হল:
◆ ১. আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে।
◆ ২. কথা বললে মিথ্যা বলে।
◆ ৩. প্রতিশ্রুতি দিলে বিশ্বাসঘাতকতা করে।
◆ ৪. এবং ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল কথা বলে।” (সহিহ বুখারী ও মুসলিম)
◍ অন্য হাদিসে আছে,
لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بالطعان، ولا اللعان، ولا الفاحش، ولا البذيء
“মুমিন কখনো দোষারোপ কারী, অভিশাপ দাতা, অশ্লীল ভাষী ও গালিগালাজ কারী হয় না।” (তিরমিজি, হাদিস নং : ২০৪৩-শাইখ আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন)
◍ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,
سِباب المُسْلِمِ فُسوقٌ، وقِتَالُهُ كُفْرٌ (متفقٌ عَلَيهِ)
“কোন মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি (পাপfচার) এবং তার সাথে লড়াই ও মারামারিতে লিপ্ত হওয়া কুফরি।” [সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬০৪৫]
◍ তাছাড়া আল্লাহ তআলা আমাদেরকে সুন্দর ভাষায় কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا
“আর তোমরা মানুষের সাথে সুন্দর ভাষায় কথা বলবে।” (সূরা বাকারা: ৮৩)
বিশেষ করে পিতামাতা তার সন্তানদের জন্য আদর্শ-অনুকরণীয়। সুতরাং তারা যদি অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে এবং নোংরা ও অন্যায় আচরণ করে তাহলে তা সন্তানদের মাঝে দ্রুত সংক্রমিত হয়। সুতরাং আদর্শ পিতামাতার উচিৎ, সন্তানদের সাথে কথাবার্তা আচরণের ক্ষেত্রে সংযম রক্ষা করা এবং সন্তানদের সামনে এমন কোন কথা না বলা বা এমন কোন আচরণ না করা যা তাদের মধ্যে খারাপ প্রভাব ফেলে।
➧ তবে মনে রাখতে হবে, সন্তানের জন্য সর্বাবস্থায় পিতামাতার আনুগত্য করা এবং তাদের সাথে সম্মান ও নম্রতা সুলভ আচরণ করা ফরজ। কোন অবস্থায় তাদের সাথে খারাপ আচরণ করা এবং তাদের নির্দেশ লঙ্ঘন বৈধ নয় যদি না তারা আল্লাহর নাফরমানি বা সাধ্যের অতিরিক্ত কোন কাজের নির্দেশ দেয়।
আর তারা যদি কখনো তার সাথে খারাপ ও অন্যায় আচরণ করে ফেলে বা বিনা দোষে অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে তাহলে কর্তব্য হল, ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়ার পাশাপাশি তাদের হেদায়েতের জন্য আল্লাহর দরবারে দুআ করা। কিন্তু তাদের অন্যায়ের প্রতিশোধ গ্রহণ করা বা তাদের সাথে উগ্রতা সুলভ আচরণ করা বৈধ নয়।
এ ক্ষেত্রে আল্লাহর সম্মানিত রসূল ইবরাহিম ও তাঁর মূর্তি পূজারী পিতা আজর এর মাঝে সংঘটিত ঘটনায় বিশ্ব মানবতার জন্য বিশাল শিক্ষা নিহিত রয়েছে। এ জন্য পড়ুন সূরা মারিয়াম এর ৪১ থেকে ৪৭ নং আয়াতগুলোর তরজমা ও তাফসির।
➧ অন্যদিকে পিতামাতার কর্তব্য হল, সন্তান যদি কোন ভুল বা অন্যায় কাজ করে ফেলে তাহলে তাকে সুন্দর ভাষায় বুঝানো, আদর ও ভালবাসা দিয়ে কাছে টেনে উপদেশ দেয়া, আন্তরিকভাবে সংশোধন করার চেষ্টা করা এবং পাশাপাশি তার হেদায়েতের জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করা। এমনকি সন্তান যদি কোন খারাপ ও আল্লাহর নাফরমানি মূলক কাজ করে বা পিতামাতার আনুগত্য না করে তাহলে তারা তাদেরকে আদব শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে হালকা প্রহার ও শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করারও অধিকার রাখে। কিন্তু কোন অবস্থায় তাদেরকে অশ্লীল ও নোংরা ভাষায় গালাগালি করা বা তাদের উদ্দেশ্যে অন্যায়ভাবে বদ দুয়া ও অভিশাপ বর্ষণ করা বৈধ নয়।
পরিশেষ দুআ করি, আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর প্রতিটি সন্তানকে তাদের পিতামাতার সেবা ও সুন্দর আচরণ করার মাধ্যমে তাদের হৃদয় জয় করার এবং প্রতিটি পিতামাতাকে সন্তানদের প্রতি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের তাওফিক দান করুন। সেই সাথে তিনি যেন আমাদেরকে সর্বাবস্থায় অশ্লীলতা, নোংরা ভাষা, রুক্ষ স্বভাব এবং খারাপ আচরণ থেকে রক্ষা করেন। আমিন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬◆◯◆▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড সেন্টার, সৌদি আরব।