পর্ণ ও অশ্লীল-নগ্ন ভিডিও দেখলে কি পরকালে আমাদের কোন আমল কাজে আসবে না বা সব আমল কি বরবাদ হয়ে যাবে

🔷🔶প্রশ্ন: পর্ণ ও অশ্লীল-নগ্ন ভিডিও দেখলে কি পরকালে আমাদের কোন আমল কাজে আসবে না বা সব আমল কি বরবাদ হয়ে যাবে?

উত্তর:

আমাদের জানা জরুরি যে, আল্লাহ তাআলা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল প্রকার অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন। আল্লাহ বলেন,
قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَن تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ

“আপনি বলে দিনঃ আমার পালনকর্তা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছে এবং হারাম করেছেন পাপাচার, অন্যায়-অত্যাচার, আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে অংশীদার করা, তিনি যার দলিল অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করা, যা তোমরা জান না।” [সূরা আরাফ: ৩৩)

ইসলামে পরপুরুষ বা পরনারীর দিকে কামনা-বাসনা সহকারে তাকানো হারাম। অনুরূপভাবে পরপুরুষ-পরনারীর লজ্জা স্থানের দিকে তাকানো হারাম। চাই তা সরাসরি হোক, বা ছবি বা ভিডিও এর মাধ্যমে হোক। পর্ণ ও অশ্লীল ভিডিও দেখার ফলে চোখের গুনাহ হয়। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَٰئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا
“নিশ্চয় কান, চক্ষু ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।” (সূরা ইসরা: ৩৬)
কিয়ামতের দিন আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে। যেমন: আল্লাহ বলেন,
الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَىٰ أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ ‎
“আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।”
(সূরা ইয়াসিন: ৬৫)

শুধু তাই নয়, আমরা প্রকাশ্যে বা গোপনে যা কিছু করি সব কিছু আল্লাহ পর্যবেক্ষণ করছেন এবং ফেরেশতামণ্ডলী রেকর্ড রাখছেন। কিয়ামতের দিন আমাদের সব গোপনীয়তা ফাঁস হয়ে যাবে-যদি আমরা তওবা না করি।

🔶🔷 পর্ণ ও অশ্লীল ভিডিও দেখার
নানা কুফল:

পর্ণ ও অশ্লীল ভিডিও দেখার ফলে আমাদের আমলনামা কলুষিত হয়, দীন ও চরিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অন্তর শয়তানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

পর্ণ ও অশ্লীলতায় ডুবে থাকা ব্যক্তির অন্তর রোগাক্রান্ত হয়। সে অন্তরে ভয়-ভীতি, অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা ও নি:সঙ্গতা অনুভব করে।
অন্তর থেকে লজ্জা শরম বিদায় নেয়, ঈমানের স্বাদ উঠে যায় এবং আল্লাহ ভীতি লোপ পায়।

তারপর সে ধীরে ধীরে নানা পাপাচারে লিপ্ত হয়, জিনা-ব্যভিচার ও নোংরামির পথ খুঁজতে থাকে, নিজের উপর জুলুম করতে থাকে, হস্তমৈথুন করে, তার শরীর ও চেহারায় পাপাচারের চিহ্ন ফুটে উঠে এবং শরীরে নানা রোগব্যাধি বাসা বাঁধে।

বিবাহিত হলে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মনোমালিন্য শুরু হতে পারে এবং প্রেম-পরকীয়া জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ তখন হালাল স্ত্রীও তার কাছে অ পছন্দনীয় হয়ে যেতে পারে।

একপর্যায়ে ইবাদত-বন্দেগিতে অনীহা সৃষ্টি হয়। এমনকি সম্ভাবনা আছে, একসময় সে আল্লাহর রাস্তা থেকে সরে যাবে। (আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন)

তবে “পর্ণ ও অশ্লীল নগ্ন ভিডিও দেখলে পরকালে তার কোনও আমল কাজে আসবে না বা তার সকল আমল বরবাদ হয়ে যায়” এ কথা সঠিক নয়। এগুলো গুনাহের কাজ হলেও শিরক-কুফরি পর্যায়ের পাপ নয় যে, এতে বান্দার সব আমল নষ্ট হয়ে যাবে।

◾এ ক্ষেত্রে করণীয় হল, পাপাচার থেকে তওবা করা এবং পর্ণ ও অশ্লীলতার সব উপকরণ থেকে দূরে থাকা এবং ইবাদত-বন্দেগিতে অধিক মনোযোগী হওয়া। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।

– আব্দু্ল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল –

Share: