ইসলামের দৃষ্টিতে অশ্লীলতা, গান, বাদ্যযন্ত্র বা মিউজিকের ব্যবহার সম্পূর্ণ হারাম এবং আল্লাহর আজাবের কারণ। কুরআন হাদিসে এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত সতর্ক বাণী উচ্চারিত হয়েছে।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করে দিয়েছেন যে, কিয়ামতের পূর্বে এমন একটি সময় আসবে যখন মানুষ গান-বাজনাকে হালাল মনে করবে। তিনি বলেন,
لَيَكُوْنَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّوْنَ الْحِرَ وَالْحَرِيْرَ وَالْخَمْرَ وَالْمَعَازِفَ
“আমার উম্মতের মধ্য থেকে এমন কিছু লোক আসবে যারা জিনা-ব্যভিচার, রেশমি কাপড়, মদ এবং বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে।” (বুখারি হা/৫৫৯০-আবু মালেক আল আশআরী রা. হতে বর্ণিত)।
তিনি আরও বলেন,
فِي هَذِهِ الْأُمَّةِ خَسْفٌ وَمَسْخٌ وَقَذْفٌ فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَتَى ذَاكَ قَالَ إِذَا ظَهَرَتِ الْقَيْنَاتُ وَالْمَعَازِفُ وَشُرِبَتِ الْخُمُورُ
‘‘এই উম্মতের মধ্যে ভূমিধ্বস, চেহারা বিকৃতি এবং উপর থেকে নিক্ষেপ করে ধ্বংস করার শাস্তি আসবে। জনৈক সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রাসূল, কখন এরূপ হবে?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যখন ব্যাপক হারে গায়িকা, বাদ্যযন্ত্র এবং মদ্যপানের প্রসার ঘটবে’’। [তিরমিযী, অধ্যায়: আবওয়াবুল ফিতান। সহীহুল জামে আস্ সাগীর, হাদিস নং- ৪১১৯।
সুতরাং
– যে সব শিল্পীরা গান গায়,
– যারা বাদ্যযন্ত্র বাজায়,
– যারা গান-বাজনা শিক্ষা দেয় ,
– যারা মিউজিক ভিডিও বানায়,
– যারা অভিনয় করে (নায়ক-নায়িকা ও অন্যান্য অভিনেতাগণ),
– যারা এসব প্রযোজনা, পরিচালনা ও দিকনির্দেশনা দেয়,
– যারা এগুলোর গল্প লিখে ও স্ক্রিপ্ট তৈরি করে,
– যারা ক্যামেরার মাধ্যমে এসব দৃশ্য ধারণ করে,
– যারা মিউজিক কম্পিটিশন করে ও ভিডিও এডিট করে,
– যারা জেনে-বুঝে এ সব কাজের জন্য ঘর বা সরঞ্জাম ভাড়া দেয়,
– যারা এসব প্রচার ও প্রসার করে,
– যারা এগুলো বাজারজাত করে,
– এবং যারা নানাভাবে তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করে তাদের সকলের এই কাজের বিনিময়ে এবং এ সংশ্লিষ্ট ব্যবসা থেকে উপার্জিত সমূদয় অর্থ হারাম। আর হাদিসে এসেছে, হারাম দ্বারা পরিপুষ্ট দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ جَسَدٌ غُذِّيَ بِالْحَرَامِ
“হারাম দ্বারা পরিপুষ্ট শরীর জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” [বায়হাক্বী, মিশকাত/২৭৮৭; সিলসিলা সহীহাহ হা/২৬০৯।]
◈ এ সকল লোক নিজেরা যেমন পাপ দ্বারা তাদের জীবনকে কুলষিত করে তেমনি সমাজকেও তারা কুলষিত করে। চতুর্দিকে পাপাচার ছড়িয়ে দেয়। এরা সকলেই যুবক-যুবতীদের চরিত্র ধ্বংস এবং অশ্লীলতা ছড়ানোর জন্য দায়ী।
এ সমস্ত লোকের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ
“যারা পছন্দ করে যে, ইমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতা প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহা ও পরকালে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।” (সূরা নূর: ১৯)
যারা কেবল অশ্লীলতার প্রসার লাভ করাকে পছন্দ করে তাদের জন্য যদি এই শাস্তির হুমকি হয় তাহলে যারা এগুলো উৎপাদন ও প্রচার-প্রসার করে তাদের কী পরিণতি হবে তা সহজেই অনুমেয়। আল্লাহ তুমি ক্ষমা করো। আমীন।
◈ আরও আতঙ্কজনক বিষয় হল, বর্তমান ইউটিউব আর ফেসবুকের যুগে এসকল গান-বাজনা ও নাটক-সিনেমা থেকে যত মানুষ গুনাহ কামাবে, যুগযুগান্তরে যত দিন এগুলো টিভিতে প্রদর্শিত হবে, সোশ্যাল মিডিয়া ও নেট জগতে শেয়ার, আপলোড-ডাউনলোড ইত্যাদি হতে থাকবে, মোবাইল মেমরি থেকে মেমরিতে কপি-পেস্ট হতে থাকবে ততদিন এর সংশ্লিষ্ট সকলের আমলনামায় অবিরত ধারায় গুনাহ জমা হতেই থাকবে। এমনকি এরা মারা যাওয়ার পরও এ গুনাহের ধারা অব্যাহত থাকবে। আল্লাহ ক্ষমা করুন।
জারীর রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ سَنَّ فِيْ الإِسْلاَمِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَ وِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يُّنْقَصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْئٌ.
“যে ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ কাজ চালু করবে তার উপরই তার গুনাহ বর্তাবে। আর ঐ মন্দ কাজ করে যত মানুষ যে পরিমাণ গুনাহ অর্জন করবে সবার সমপরিমাণ গুনাহ তার আমলনামায় লেখা হবে। কিন্তু তাদের কারো গুনাহ এতটুকুও কম করা হবে না” (মুসলিম, মিশকাত হা/২১০; বাংলা মিশকাত ২য় খণ্ড, হা/২০০‘ইলম’ অধ্যায়)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
مَنْ سَنَّ سُنَّة سَيِّئَة فعَلَيْهِ مِثْل وِزْر كُلّ مَنْ عمل بِهَا إِلَى يَوْم الْقِيَامَة
‘‘যে ব্যক্তি কোন খারাপ কাজ (আল্লাহর নাফরমানি, পাপ, অন্যায়-অপকর্ম, বিদআত ইত্যাদি) চালু করলো কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ সে কাজ করবে তাদের সমপরিমাণ গুনাহ তার উপর পতিত হতে থাকবে। (সহিহ মুসলিম: ১৬৯১)
সুতরাং গান-বাজনা, সিনেমা, নাটক, টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন মডেলিং, অভিনয় পেশা, মিউজিক ভিডিও নির্মাণ ইত্যাদি কর্মের সাথে জড়িত প্রত্যেক শিল্পীর জন্য তাদের জীবদ্দশায় লজ্জিত অন্তরে খাঁটি ভাবে তওবা করত আল্লাহর পথে ফিরে আসা আবশ্যক।
তারা যদি তওবা করে এবং তাদের প্রকাশিত পূর্বের সকল গানবাজনা ও ভিডিও ইত্যাদি যথাসম্ভব ধ্বংস কিংবা বন্ধ করার ব্যবস্থা করে তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহ তাদের সকল গুনাহ মোচন করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরণের পাপাচার, অশ্লীলতা ও আল্লাহর অসন্তোষ মূলক কার্যক্রম থেকে হেফাজত করুন এবং অতীতের সকল গুনাহ থেকে মুক্ত করুন। আমিন।
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।