❑ প্রশ্ন-১: নতুন বছরের ১ম দিন কি নফল রোজা রাখা যাবে?
উত্তর: নতুন বছরের ১ম দিন বর্ষবরণের উদ্দেশ্যে বিশেষ কোন নামাজ, রোজা, কুরআন তিলাওয়াত, দুআ বা অন্য কোন ইবাদত নেই। চাই তা খ্রিষ্টীয় নববর্ষ হোক বা বাংলা নববর্ষ হোক কিংবা হিজরি নববর্ষ হোক। কেননা ইসলামে বর্ষবরণের জন্য এমন কোনও নির্দেশনা আসেনি। অর্থাৎ ইসলামের সোনালী যুগ তথা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবি ও তাবেয়ীদের থেকে এমন কোনও আমল প্রমাণিত হয়নি। তাই এই নিয়তে এসব কিছু করলে তা বিদআত বা দ্বীনের মধ্যে নব আবিষ্কৃত আমল হিসেবে গণ্য হবে-যা কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত।
আমাদের মনে রাখা কর্তব্য যে, বিদআতি আমলে নেকির পরিবর্তে গুনাহ দ্বারা আমলনামা পূর্ণ হয় যদিও বাহ্যত তা দেখতে নেকির কাজ বা ভালো কাজ বলে মনে হয়। মূলতঃ এগুলোই হলো, “নেক সুরতে শয়তানের ধোঁকা।” (আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমিন।)
✪✪ বিদআত তথা ইসলামের নামে দ্বীনের মধ্যে নিত্য-নতুন আবিষ্কারের ভয়াবহতা সম্পর্কে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন:
◈ আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
“যে ব্যক্তি এমন কোন আমল (দ্বীনের কাজ) করল যে ব্যাপারে আমার নির্দেশনা নেই তা (আল্লাহর নিকট) পরিত্যাজ্য।” [বুখারী ও মুসলিম]
◈ আয়েশা রা. থেকে আরও বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ
“যে ব্যক্তি আমাদের এ বিষয়ে (দ্বীনের ক্ষেত্রে) নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটাল যা তার অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।” [বুখারী ও মুসলিম]
◈ অন্য হাদিসে এসেছে, জাবের রা. থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগানের পর বললেন,
أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيْثِ كِتَابُ اللهِ وَخَيْرَ الْهَدْىِ هَدْىُ مُحَمَّدٍ وَشَرَّ الأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ. وَفِيْ نَسَائِي [وَكُلُّ ضَلاَلَةٍ فِى النَّارِ].
“নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠ বাণী হল, আল্লাহর কিতাব এবং শ্রেষ্ঠ হেদায়েত (পথনির্দেশ) হল, মুহাম্মদের হেদায়েত (পথনির্দেশ)। আর নিকৃষ্টতম কাজ হল, দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি এবং প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই হল, ভ্রষ্টতা।” [মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১]
আর সুনানে নাসাঈতে রয়েছে, “প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি জাহান্নাম” [নাসাঈ হা/১৫৭৮]।
তবে বছরের ১ম দিন কেউ যদি রমজান বা মানতের কাজা কাজা রাখতে চায় অথবা সে দিনটি যদি সোম বা বৃহস্পতিবার হয় আর সে এ নিয়তে নফল রোজা রাখতে চায় অথবা যদি সে দিনটি আইয়ামে বীয তথা আরবি মাসের ১৩, ১৪ কিংবা ১৫ তারিখ হয় এবং সে দিন বীযের নিয়তে নফল রোজা রাখতে চায় তাহলে তাতে কোনও সমস্যা নেই। অনুরূপভাবে সাধারণ নফল ইবাদত হিসেবে বছরের যে কোন দিন (নিষিদ্ধ দিনগুলো ছাড়া) রোজা রাখতে পারে। সে হিসেবে তা বছরের ১ম দিন হলেও কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু তা অবশ্যই নতুন বছরের আগমন বা বর্ষবরণের নিয়তে রাখা জায়েজ নয়। অন্যথায় তা বিদআতে পরিণত হবে। কারণ ইসলামে নিয়তের উপরেই আমলের পরিণতি নির্ভর করে। যেমন: রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إنَّما الأعمالُ بالنِّيَّاتِ وإنَّما لِكلِّ امرئٍ ما نوى
“প্রতিটি আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। আর প্রতিটি মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে।” [সহিহ বুখারি-১ম হাদিস]
❑ প্রশ্ন-২: আমরা জানি যে, অনেক মানুষ নানা হারাম কাজের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করে। কিন্তু আমি যদি অর্ধ রাতের পরে তাহাজ্জুদের সালাত বা কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে তা বরণ করি তাহলে কি জায়েজ হবে?
উত্তর: বর্ষবরণের উদ্দেশ্যে, অর্ধ রজনীর পর তাহাজ্জুদের সালাত আদায়, কুরআন তিলাওয়াত বা বিশেষ কোনও ইবাদত-বন্দেগি করার ক্ষেত্রেও উপরোক্ত বক্তব্য প্রযোজ্য। অর্থাৎ এ উপলক্ষে যা কিছু করা হবে সবই বিদআতের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ তাআলা নতুন বছরকে আমাদের জন্য কল্যাণময় করুন এবং সব ধরণের পাপাচার, অন্যায়-অপকর্ম, শিরক, বিদআত সহ সবধরনের আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কার্যক্রম থেকে রক্ষা করুন। আমিন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।