প্রশ্ন: দু জন মিলে জামাআতে সালাত আদায় করলে মুক্তাদি ইমামের ডান পার্শ্বে না কি বাম পার্শ্বে দাঁড়াবে এবং সে ক্ষেত্রে সে কি ইমামের বারাবর দাঁড়াবে না কি কিছুটা পেছনে সরে দাঁড়াবে?
উত্তর:
দু জন ব্যক্তি জামাআতে সালাত আদায় করলে মুক্তাদি ইমামের ডান পাশে দাঁড়াবে। ক্ষেত্রে ইমাম-মুক্তাদি পাশাপাশি পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দাঁড়াবে। মুক্তাদি ইমাম থেকে চার আঙ্গুল বা কিছুটা পেছনে সরে দাঁড়ানোর প্রচলিত রীতি সুন্নাহ পরিপন্থী।
এ মর্মে একাধিক হাদিস ও সাহাবীদের আমল তুলে ধরা হল:
◉ ইমাম বুখারী সহিহ বুখারীতে এ মর্মে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন:
بَاب يَقُومُ عَنْ يَمِينِ الْإِمَامِ بِحِذَائِهِ سَوَاءً إِذَا كَانَا اثْنَيْنِ
পরিচ্ছেদঃ দু জন ব্যক্তি সলাত আদায় করলে, মুক্তাদী ইমামের ডানপাশে সোজাসুজি দাঁড়াবে।
তারপর তিনি নিম্নোক্ত হাদিসটি পেশ করেন:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ بِتُّ فِي بَيْتِ خَالَتِي مَيْمُونَةَ فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْعِشَاءَ، ثُمَّ جَاءَ فَصَلَّى أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ ثُمَّ نَامَ، ثُمَّ قَامَ فَجِئْتُ فَقُمْتُ عَنْ يَسَارِهِ، فَجَعَلَنِي عَنْ يَمِينِهِ، فَصَلَّى خَمْسَ رَكَعَاتٍ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ نَامَ حَتَّى سَمِعْتُ غَطِيطَهُ ـ أَوْ قَالَ خَطِيطَهُ ـ ثُمَّ خَرَجَ إِلَى الصَّلاَةِ
ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি আমার খালা মায়মুনা রা. এর ঘরে রাত কাটালাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘ইশার সালাত আদায় করে আসলেন এবং চার রাক‘আত সালাত আদায় করে শুয়ে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর উঠে সালাতে দাঁড়ালেন। তখন আমিও তাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে তাঁর ডানপাশে নিয়ে নিলেন এবং পাঁচ রাকআত সালাত আদায় করলেন।
অতঃপর আরও দু রাকআত সালাত আদায় করে নিদ্রা গেলেন। এমনকি আমি তাঁর নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। তারপর তিনি (ফজরের) সালাতের জন্য বের হলেন।”
[সহীহ বুখারী (তাওহীদ) / অধ্যায়ঃ ১০/ আযান (كتاب الأذان), পরিচ্ছেদঃ ১০/৫৭. দু’জন সলাত আদায় করলে, মুক্তাদী ইমামের ডানপাশে সোজাসুজি দাঁড়াবে। হাদিস নং তাওহীদ প্রকাশনী: ৬৯৭ , আধুনিক প্রকাশনী: ৬৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৬৬৩)]
অত্র হাদিসে জানা গেলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে আব্বাস রা. কে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর থেকে চার আঙ্গুল বা কিছুটা পেছনে দাঁড় করান নি। আর এ কারণে ইমাম বুখারী সহিহ বুখারীতে অনুচ্ছেদ রচনা করেে বলেছেন: “দু জন ব্যক্তি সলাত আদায় করলে, মুক্তাদী ইমামের ডানপাশে সোজাসুজি দাঁড়াবে।” (যেমনটি উপরে আলোচনা করা হয়েছে)।
◉ অন্য হাদিসে এসেছে:
عَنْ عُبَيْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُتْبَةَ عَنْ أَبِيهِ أَنَّهُ قَالَ دَخَلْتُ عَلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ بِالْهَاجِرَةِ فَوَجَدْتُهُ يُسَبِّحُ فَقُمْتُ وَرَاءَهُ فَقَرَّبَنِي حَتَّى جَعَلَنِي حِذَاءَهُ عَنْ يَمِينِهِ فَلَمَّا جَاءَ يَرْفَا تَأَخَّرْتُ فَصَفَفْنَا وَرَاءَهُ.
উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি উমার ইবনুল খাত্তাব রা. এর নিকট প্রবেশ করলাম। সময়টা ছিল গরম। আমি তখন তাঁকে নফল সালাত রত (সালাতুয যোহা বা চাশতের সালাত) অবস্থায় পেলাম। তাই আমি তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম। তারপর তিনি আমাকে কাছে আনলেন এবং তাঁর ডান পার্শ্বে তাঁর বরাবর আমাকে দাঁড় করালেন। তারপর ইয়ারফা (উমর রা. এর খাদেম) আসলে আমি পেছনে সরে আসলাম। তারপর আমরা দু’জনেই তাঁর পেছনে কাতার করে দাঁড়ালাম।
[মুআত্তা মালিক: পরিচ্ছদ-৯, চাশতের সময় বিভিন্ন নফল নামাযের বর্ণনা, হাদিস নং ৩৪৮, সনদ সহিহ]
◉ আব্দুর রাযযাক তার মুসান্নাফ হাদিসগ্রন্থে ইবনে জুরাইজ থেকে বর্ণনা করেন,
قلت لعطاء: الرجل يصلي مع الرجل، أين يكون منه؟ قال: إلى شقه الأيمن، قلت: أيحاذي به حتى يصف معه لا يفوت أحدهما الآخر؟ قال: نعم، قلت: أتحب أن يساويه حتى لا تكون بينهما فرجة؟ قال: نعم
তিনি বললেন, আমি আত্বাকে জিজ্ঞেস করলা:, একজন ব্যক্তি আরেকজনের সাথে সালাত আদায় করলে সে কোথায় অবস্থান করবে?
তিনি বললেন: তার ডান পাশে।
আমি বললাম: সে কি তার সাথে এমন সমন্তরালভাবে কাতারবন্দি হয়ে দাঁড়াবে যে, একজন অপরজন থেকে দূরে থাকবে না?
তিনি বললেন: হ্যাঁ।
আমি বললাম: আপনি এটা পছন্দ করেন যে, সে তার এমন বরাবর দাঁড়াবে যে, তাদের মাঝ কোনো ফাঁক থাকবে না?
তিনি বললেন: হ্যাঁ।
◉ ইমাম মালিক তার মুআত্তা গ্রন্থে (১/১৫৪) নাফে রা. থেকে বর্ণনা করেন:
قمت وراء عبد الله بن عمر في صلاة من الصلوات وليس معه أحد غيري، فخالف عبد الله بيده، فجعلني حذاءه
তিনি বলেন, আমি এক নামাযে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. এর পেছনে দাঁড়ালাম। তার সাথে আমি ছাড়া অন্য কেউ ছিলো। তখন তিনি পেছনে হাত নিয়ে আমাকে টেনে তার বরবার দাঁড় করালেন।”
এ ছাড়া এ সম্পর্কে আরও অনেক আসার (সাহাবীদের বক্তব্য ও আমল) বিদ্যমান রয়েছে আল হামদুলিল্লাহ।
▣ আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, হাদিসে কাতার সোজা করার ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্ব এসেছে এবং কাতারে বক্রতা থাকার ব্যাপারে সতর্কতা এসেছে। যেমন:
◉ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
سَوُّوا صُفُوفَكُمْ فَإِنَّ تَسْوِيَةَ الصُّفُوفِ مِنْ إِقَامَةِ الصَّلاَةِ
“তোমরা কাতার সোজা কর। কেননা কাতার সোজা করা সালাত প্রতিষ্ঠার অন্তর্ভুক্ত।” [মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৮৭, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪]
◉ তিনি আরও বলেন:
اسْتَوُوا وَلاَ تَخْتَلِفُوا فَتَخْتَلِفَ قُلُوبُكُمْ
“তোমরা কাতার সোজা কর, বিভক্ত হয়ে দাঁড়িয়ো না। তাতে তোমাদের অন্তরগুলো বিভক্ত হয়ে যাবে।”
[মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৮৮, ‘কাতার সোজা করা’ অনুচ্ছেদ-২৪]
এ বিষয়ে আরও অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
সুতরাং ইমাম ও মুক্তাদি দু জন হলেও যেহেতু এটি একটি কাতার সেহেতু মুক্তাদি এভাবে ইমাম থেকে একটু পেছনে সরে দাঁড়ালে কাতার সোজা হল না। সে কারণে তা সুন্নাহ পরিপন্থী কাজ হবে।
সঠিক পদ্ধতি হল, দু জন ব্যক্তি সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে ইমাম ও মুক্তাদি সমান্তরালভাবে পাশাপাশি দণ্ডায়মান হবে। তবে মুক্তাদি সতর্ক থাকবে যেন, সে ইচ্ছাকৃত ভাবে ইমাম থেকে কিছুটা সামনে চলে না যায়। কেননা ইচ্ছাকৃত ইমামের সামনে চলে গেলে মুক্তাদির সালাত বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু বেখেয়ালে সামনে চলে গেলে তৎক্ষণাৎ পেছনে সরে আসবে। এতে সালাতের কোন ক্ষতি হবে না ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬💠🌀💠 ▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব।