দাওয়াতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি

দাওয়াতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি: দাওয়াতি ময়দানে যেগুলো লক্ষ্য রাখা অপরিহার্য
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আমরা অনেকেই দাওয়াতের কাজে আগ্রহ প্রকাশ করি। নিঃসন্দেহে এটি প্রশংসনীয়। তবে দাওয়াতের মূলনীতিগুলো সম্পর্কে সচেতন না থাকা কিংবা এগুলোর প্রতি অবহেলা করার ফলে অনেক সময় এই মহৎ পথ ঝগড়া, কোন্দল ও বিদ্বেষ দ্বারা কলুষিত হয়ে পড়ে এবং আল্লাহর দ্বীনের উপকারের থেকে ক্ষতিই বেশি হয়।
তাই এখানে সংক্ষেপে দাওয়াতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি তুলে ধরা হলো:
১. সালাফে-সালেহিনের অনুসরণ: দাওয়াতি কাজে সালাফে-সালেহিন অর্থাৎ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এবং এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ দুই প্রজন্ম সাহাবি ও তাবেয়িদের মানহাজ (পন্থা) ও মূলনীতি অনুসরণ করুন। তাদের মানহাজ এবং মূলনীতিই আমাদের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ।
২. তাওহিদ ও সুন্নাহর প্রতি আহ্বান: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মূল বিষয় তথা তাওহিদ ও সুন্নাহর পথে সর্বসাধারণকে আহ্বান করুন এবং শিরক, বিদআত ও কুসংস্কার থেকে সাবধান করুন। সর্বক্ষেত্রে এটিকে প্রাধান্য দিন। তারপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিষয়ের দিকে দাওয়াত দিন।
৩. মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস: মুসলিম উম্মাহর ঐক্যকে গুরুত্ব দিন। ঐক্য একটি বিশাল শক্তি, যা অনৈক্যের মাধ্যমে দুর্বল হয়ে যায়। অনৈক্য ও কোন্দল কাফিরদের জন্য মুসলিমদের বিপর্যয় ঘটানোর সুযোগ সৃষ্টি করে।
৪. মতবিরোধে সহনশীলতা: শাখাগত মতবিরোধে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন। ভদ্রতার সঙ্গে আলোচনা-পর্যালোচনা করুন। ঝগড়া, অশ্লীল ভাষা বা সহিংসতা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
৫. আল্লাহর দ্বীনকে কেন্দ্রীভূত করুন: মানুষকে আল্লাহ এবং তাঁর শাশ্বত মহান দ্বীনের প্রতি আহ্বান করুন; কোনও ব্যক্তি, দল, সংগঠন, প্রতিষ্ঠান কিংবা বিশেষ কোন মতাদর্শের প্রতি প্রতি নয়। আল্লাহ আমাদেরকে দাওয়াতের ক্ষেত্রে এ নীতিই শিক্ষা দিয়েছেন। [সূরা নাহল: ১২৫]
৬. ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরা: ইসলামের সৌন্দর্যময় দিকগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরুন, যা তাদেরকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করবে।
৭. সত্য ও সাহসিকতা: বুকে অদম্য সাহস নিয়ে সত্য পথে অটল থাকুন। যদি সত্য বলতে অপারগ হন তবে কখনো মিথ্যার আশ্রয় নেবেন না।
৮. ধৈর্যের প্রয়োজনীয়তা: দাওয়াতের কাজে ধৈর্য অপরিহার্য। ধৈর্যের অভাবে দাওয়াতের কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে।
৯. কাফে**রদের প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি: শরিয়তের আলোকে কা**ফেরদের সঙ্গে আচরণ করুন। তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান থেকে উপকৃত হওয়া ইসলামবিরোধী নয়। দাওয়াতের স্বার্থে তাদের সাথে সদাচরণ করুন। কিন্তু তাদের বাতিল ধর্ম, অপসংস্কৃতি এবং কুসংস্কার সম্পর্কে নিজে সতর্ক থাকা এবং অন্যদের সতর্ক করা আবশ্যক।
১০. সহজতা ও নম্রতা: ইসলামকে সহজ, নম্র ও ভদ্রভাবে উপস্থাপন করুন। রুক্ষ আচরণ, আক্রমণাত্মক ভাষা বা হেয় প্রতিপন্ন করার মাধ্যমে দাওয়াতি কাজ করা যায় না। এতে শুধু নিজের ক্রোধ প্রকাশিত হয়।
১১. দাওয়াতের পাশাপাশি মানুষের সাথে সদাচরণ করুন এবং সুন্দর ভাষায় কথা বলুন। তাদের কল্যাণে যথাসম্ভব অবদান রাখুন এবং তাদের কষ্ট লাঘবে কাজ করুন। সুন্দর আচার-ব্যবহার এবং মানুষের উপকার আপনাকে তাদের কাছে সন্মানের পাত্র, বিশ্বস্ত ও গ্রহনযোগ্য করে তুলবে।
১২. জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনীয়তা: কথা বলা বা আমল করার আগে বিজ্ঞ আলেমদের নিকট থেকে সঠিক পন্থায় জ্ঞানার্জন করুন। প্রচুর পড়াশোনা করুন। জ্ঞান দ্বারা নিজেকে সুসজ্জিত করুন। কোনও বিষয়ে নিশ্চিত জ্ঞান না থাকলে যোগ্য আলেমদেরকে প্রশ্ন করুন এবং তাদের থেকে পরামর্শ নিন। শুধুমাত্র বই পড়ে বা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে কিছু ভিডিও দেখেই শরিয়তের কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ।
১৩. আন্তরিকতা: খালেস নিয়তে ও দরদ ভরা বুকে পথভ্রষ্ট মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে দাওয়াত দিন এবং সংশোধন প্রচেষ্টা অব্যহত রাখুন।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আমলে সালেহ (সৎকর্ম) করার পাশাপাশি দাওয়াতি ময়দানে কাজ করা এবং ইসলাম প্রচারে অবদান রাখার তাওফিক দিন এবং তা কবুল করুন। আমিন।
গ্রন্থনা: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ অ্যান্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।
Share: