প্রশ্ন: তাওরাত ও ইনজিল কি মহান আল্লাহর নাজিল কৃত আসমানি গ্রন্থ? ইহুদি আর খৃষ্টানরা কি এইগুলো যথার্থভাবে মানে? যদি যথাযথভাবে মানে তবে তারা ভিন্ন ধর্ম কেন?
উত্তর:
তাওরাত ও ইনজিল আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিল কৃত আসমানি কিতাব কিন্তু ইহুদি ও খৃষ্টান ধর্ম যাজকরা সেগুলো তাদের ইচ্ছেমত পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেছে। অর্থাৎ এ দুটি আসমানি কিতাব তাদের পণ্ডিতদের মাধ্যমে বিকৃতির শিকার হয়েছে। স্বয়ং কুরআন তাদের আসমানি কিতাব বিকৃতির বিষয়টি ফাঁস করেছে।
◍ আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَقَدْ كَانَ فَرِيقٌ مِّنْهُمْ يَسْمَعُونَ كَلَامَ اللَّهِ ثُمَّ يُحَرِّفُونَهُ مِن بَعْدِ مَا عَقَلُوهُ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
“তাদের মধ্যে একদল ছিল, যারা আল্লাহর বাণী শ্রবণ করত; অতঃপর বুঝে-শুনে তা পরিবর্তন করে দিত এবং তারা তা অবগত ছিল।” [সূরা বাকারা: ৭৫]
◍ তিনি আরও বলেন,
فَبِمَا نَقْضِهِم مِّيثَاقَهُمْ لَعَنَّاهُمْ وَجَعَلْنَا قُلُوبَهُمْ قَاسِيَةً ۖ يُحَرِّفُونَ الْكَلِمَ عَن مَّوَاضِعِهِ ۙ وَنَسُوا حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُوا بِهِ ۚ وَلَا تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلَىٰ خَائِنَةٍ مِّنْهُمْ إِلَّا قَلِيلًا
“অতএব, তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের দরুন আমি তাদের উপর অভিসম্পাত করেছি এবং তাদের অন্তরকে কঠোর করে দিয়েছি। তারা কালামকে তার স্থান থেকে বিচ্যুত করে দেয় (বিকৃত করে) এবং তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা তা থেকে উপকার লাভ করার বিষয়টি বিস্মৃত হয়েছে। আপনি সর্বদা তাদের কোন না কোন প্রতারণা সম্পর্কে অবগত হতে থাকেন, তাদের অল্প কয়েকজন ছাড়া।” [সূরা মায়িদা: ১৩]
এভাবে আল্লাহ তাআলা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে তাদের আল্লাহর কালামকে বিকৃত করার ভয়াবহ ঘটনা ফাঁস করেছেন।
এর প্রমাণ বাইবেল [তাওরাত ও বাইবেল এর সমন্বিত রূপ-the Old Testament and the New Testament] এর একাধিক ভার্সন পাওয়া যাওয়া। যেগুলোর মাঝে নানা পার্থক্য ও অঙ্গতি বিদ্যমান। তার অর্থ দাঁড়ায় যুগে যুগে তাদের ধর্মযাজকরা তাদের খেয়ালখুশি অনুযায়ী কিছু বাক্য ও বিধান সংযোজন-বিয়োজন করে মানুষকে বলেছে, এটা আল্লাহর কালাম।
সুতরাং স্বভাবতই এ দুটি সম্প্রদায় তাদের ধর্ম থেকে বিচ্যুত। তাই তো আল্লাহ তাআলা কুরআনের প্রথম সূরা ফাতিহায় হুহুদি সম্প্রদায়কে ‘মাগযুব আলাইহিম’ (আল্লাহর ক্রোধের শিকার) এবং খৃষ্টান সম্প্রদায়কে যা-ল্লীন (পথভ্রষ্ট) হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
আর বাস্তবে ইহুদি-খৃষ্টানরা তাদের ধর্ম অনুসরণ করে না। বরং অল্প কিছু মানুষ আছে যারা তাদের বিকৃত ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী চলে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ তাদের ধর্মকে উপেক্ষা করে নিজেদের প্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশি অনুযায়ী অনুযায়ী চলাকে তাদের জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হিসেবে স্থির করে নিয়েছে।
যদি তারা তাদের ধর্মগ্রন্থ সঠিকভাবে মানতো তাহলে তারা অবশ্যই শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে রাসূল হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে ইসলামে প্রবেশ করতো। কারণ তাদের ধর্মীয় গ্রন্থেই তাঁর আগমনের সুসংবাদ বিবৃত হয়েছে। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُم مُّصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِن بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ ۖ فَلَمَّا جَاءَهُم بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا هَٰذَا سِحْرٌ مُّبِينٌ
“স্মরণ কর, যখন মরিয়ম-তনয় ঈসা (আঃ) বললঃ “হে বনী ইসরাইল! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত রসূল, আমার পূর্ববর্তী তওরাতের আমি সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রসূলের সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আগমন করবেন। তাঁর নাম আহমদ। অতঃপর যখন সে স্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে আগমন করল, তখন তারা বললঃ এ তো এক প্রকাশ্য যাদু।” [সূরা সাফ্ফ: ৬)
❑ ইহুদি-খৃষ্টানদের ভয়ঙ্কর পরিণতি:
জরুরি জানার বিষয় হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবী হিসেবে পৃথিবীতে আবির্ভাবের পর আগের সব ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থের ভ্যালিডিটি শেষ হয়ে গেছে। বরং বিশ্ববাসীর জন্য শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রিসালাত ও তার উপর নাজিল কৃত আসমানি কিতাব আল কুরআনে বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক হয়ে গেছে। কেউ তা না করলে সে নিশ্চিতভাবে জাহান্নামের আগুনে চিরকালের জন্য প্রবেশ করবে।
◈ আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَّقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ ثَالِثُ ثَلَاثَةٍ ۘ وَمَا مِنْ إِلَٰهٍ إِلَّا إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۚ وَإِن لَّمْ يَنتَهُوا عَمَّا يَقُولُونَ لَيَمَسَّنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
“নিশ্চয় তারা কাফের, যারা বলে, আল্লাহ তিনের এক; অথচ এক উপাস্য ছাড়া কোন উপাস্য নেই। যদি তারা স্বীয় উক্তি থেকে নিবৃত্ত না হয়, তবে তাদের মধ্যে যারা কুফরে অটল থাকবে, তাদের উপর যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি পতিত হবে।” [সূরা মায়িদা: ৭৩]
◈ তিনি আরও বলেন,
قَاتِلُوا الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حَتَّىٰ يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَن يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُونَ - وَقَالَتِ الْيَهُودُ عُزَيْرٌ ابْنُ اللَّهِ وَقَالَتِ النَّصَارَى الْمَسِيحُ ابْنُ اللَّهِ ۖ ذَٰلِكَ قَوْلُهُم بِأَفْوَاهِهِمْ ۖ يُضَاهِئُونَ قَوْلَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِن قَبْلُ ۚ قَاتَلَهُمُ اللَّهُ ۚ أَنَّىٰ يُؤْفَكُونَ
“তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে। ইহুদিরা বলে ওযাইর আল্লাহর পুত্র এবং নাসারারা বলে ‘মসিহ আল্লাহর পুত্র’। এ হচ্ছে তাদের মুখের কথা। এরা পূর্ববর্তী কাফেরদের মত কথা বলে। আল্লাহ এদের ধ্বংস করুন, এরা কোন উল্টা পথে চলে যাচ্ছে।” (সূরা তওবা: ২৯ ও ৩০)
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الأُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلاَ نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ إِلاَّ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ
“সে সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ-ইহুদি হোক আর খৃষ্টান হোক-যে ব্যক্তি আমার ব্যাপারে শুনেছে অথচ আমার রিসালাতের উপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করেছে সে অবশ্যই জাহান্নামি হবে। [সহীহ মুসলিম: ২৮৩ ]
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল, সৌদি আরব।