জমি বন্ধক: হারাম বনাম হালাল পদ্ধতি

প্রশ্ন: কারো কাছ থেকে আমি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কিছু টাকা নেবো, বিনিময়ে একই সময়ের জন্য আমি আমার একটি জমি চাষ করার জন্য তাকে দিবো। এভাবে চুক্তি করা কি বৈধ হবে?
উত্তর:
প্রথমে জানা দরকার সুদ কাকে বলে?
সুদের পরিচয়ে ইসলামের সর্বসম্মত একটি মূলনীতি হল,
القرض الذي يؤدي إلى نفع مشترط للمقرض؛ فهو ربا
“ঋণ দানকারীর শর্তসাপেক্ষ সুবিধার ফলস্বরূপ ঋণকে সুদ বলে।”
অর্থাৎ ঋণদাতার সাথে যদি এ মর্মে শর্ত থাকে যে, ঋণের বিনিময়ে সে ফায়দা/সুবিধা গ্রহণ করবে বা তাকে ফায়দা/সুবিধা দেয়া হবে তাহলে তা সুদ বলে গণ্য হবে।
এ ব্যাপারে একটি হাদিস রয়েছে। তা হল,
كل قرض جر منفعة فهو ربا
“প্রতিটি ঋণ যা সুবিধা/লাভ দেয় তা রিবা (সুদ)।” এ হাদিসটি সনদের বিচারে দুর্বল হলেও এর মর্মার্থটা সঠিক। [আশ শারহুল মুমতি ৯/১০৮-১০৯]
তাহলে এর উপর ভিত্তি করে বলব, আপনি যখন কারও নিকট নির্দিষ্ট মেয়াদে টাকা নিবেন আবার নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে তাকে তা ফেরত দিবেন তখন এটি মূলত: ‘ঋণ লেনদেন’ বলে গণ্য হবে। মাঝখানে এই ঋণের বিনিময়ে যদি ঋণদাতাকে আপনি চাষাবাদের জন্য একটা জমি দেন আর সে তা থেকে ফায়দা গ্রহণ করে তাহলে আপনি তাকে সুদ দিলেন আর সে সুদ গ্রহণ করলো। এটা সম্পূর্ণ হারাম। ইসলামে সুদ দাতা ও গ্রহীতা সমান গুনাহগার।
আর আমাদের অজানা নয় যে, কুরআন হাদিসে সুদের ব্যাপারে অনেক কঠোর নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে। যেমন:
– আল্লাহ তাআলা কুরআনে সুদকে হারাম ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন,
أَحَلَّ اللهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا
“আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন।” (সূরা বাকারা: ২৭৫)
– সুদ একটি ধ্বংসাত্মক পাপ:
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
اجتَنبوا السَّبعَ الموبقاتِ . قالوا : يا رسولَ اللهِ : وما هنَّ ؟ قال : الشِّركُ باللهِ ، والسِّحرُ ، وقتلُ النَّفسِ الَّتي حرَّم اللهُ إلَّا بالحقِّ ، وأكلُ الرِّبا ، وأكلُ مالِ اليتيمِ ، والتَّولِّي يومَ الزَّحفِ ، وقذفُ المحصَناتِ المؤمناتِ الغافلاتِ) [رواه البخاري]
‘‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে থাকো। সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, সেগুলো কি? তিনি বললেন,
১) আল্লাহর সাথে শিরক করা।
২) যাদু করা।
৩) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা যা আল্লাহ তাআলা হারাম করে দিয়েছেন।
৪) সুদ খাওয়া।
৫) এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করা।
৬) যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা।
৭) সতী-সাধ্বী ইমানদার নারীকে (ব্যভিচারের) অপবাদ দেয়া। (সহিহ বুখারি)
– সুদ একটি অভিশপ্ত কাজ আর সুদ দাতা ও গ্রহীতা সমান গুনাহগার:
জাবের রা. হতে বর্ণিত,
لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ آكِلَ الرِّبَا وَمُؤْكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ هُمْ سَوَاءٌ
“সুদ গ্রহীতা, সুদ দাতা, সুদের লেখক এবং সাক্ষী দ্বয়কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, তারা সকলেই সমান (গুনাহগার)।” [সহিহ মুসলিম]

– এ ক্ষেত্রে সঠিক ও হালাল পদ্ধতি কি?

সঠিক পদ্ধতি হল, জমি লিজ/ভাড়া দেয়া। অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে কাউকে জমি দিবেন। সে তা চাষাবাদ করবে বা তার যে কোনও প্রয়োজনে ব্যবহার করবে।
তারপর চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলে সে আপনার জমি আপনাকে ফেরত দিবে। কিন্তু তার নিকট আপনার প্রদত্ত টাকা (পূর্ণ অথবা কিছু কম) ফেরত নিতে পারবেন না বা জমির বিনিময়ে অন্য কোনও অর্থও দাবী করতে পারবেন না। এভাবে জমি লিজ/ভাড়া দেয়া হলে তা হবে হালাল এবং শরিয়ত সম্মত। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাফি’ বিন খাদিজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“‏ إِنَّمَا يَزْرَعُ ثَلاَثَةٌ رَجُلٌ لَهُ أَرْضٌ فَهُوَ يَزْرَعُهَا وَرَجُلٌ مُنِحَ أَرْضًا فَهُوَ يَزْرَعُ مَا مُنِحَ وَرَجُلٌ اسْتَكْرَى أَرْضًا بِذَهَبٍ أَوْ فِضَّةٍ ‏”‏ ‏.‏
“তিন ব্যাক্তি জমি চাষাবাদ করবে। যথা:
(১) যার জমি আছে সে তা চাষাবাদ করবে,
(২) যাকে ধারে জমি দান করা হয়েছে সে তার চাষাবাদ করবে এবং
(৩) যে ব্যক্তি নগদ সোনা-চাঁদি দ্বারা অর্থাৎ নগট টাকায় জমি ভাড়া নেয়।”
[সহীহুল বুখারি ও মুসলিম]
আল্লাহ তাআলা লেনদেনের ক্ষেত্রে আমাদেরকে হালাল-হারাম জেনে-বুঝে তদনুযায়ী চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬◍❂◍▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

Share: