চলতে-ফিরতে, কাজের ফাঁকে ফাঁকে দুআ ও যিকির পাঠ এবং কাজে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় কুরআনের তিলাওয়াত প্লে করা

প্রশ্ন: ক. চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে, ফাঁকে ফাঁকে যদি সুবহানাল্লা-হ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ ইত্যাদি যিকির, দুআ, তাসবীহগুলো পাঠ করি তাহলে কি পূর্ণ নেকি পাবো? কারণ গীবত, সমালোচনা ও অনর্থক কথাবার্তা বাদ গিয়ে মুখে এগুলো পাঠ করছি। এতে কি আমার এ দুআগুলোর প্রকৃত সওয়াব হবে না কি এভাবে পাঠ করলে আমার সওয়াব কমে যাবে?

খ. রান্না-বান্না, গৃহস্থালির কাজ বা অফিসের কাজে রত অবস্থায় কি মোবাইল, কম্পিউটার বা টিভিতে কুরআন তিলাওয়াত চালু রাখা বৈধ হবে?

উত্তর:

 ক. কোন ব্যক্তি যদি সাংসারিক কাজের সময়, পেশাগত কাজের ফাঁকে ফাঁকে, চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে, গাড়িতে বসে, কারও জন্য অপেক্ষার সময়টুকুতে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, আস্তাগফিরুল্লাহ ইত্যাদি দুআ ও তাসবীহগুলো মনে মনে স্মরণ করে অথবা মুখে উচ্চারণ করে তাহলেও ইনশাআল্লাহ সওয়াব হবে-যদিও এগুলো অর্থের দিকে মনোযোগ না থাকে।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّـهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَـٰذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
“যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহর যিকির (স্মরণ) করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও।” (সূরা আলে ইমরান: ১৯১)

এর আরেকটি উপকার আছে। তা হল, জিহ্বাকে বাজে, অনর্থক ও গুনাহের কাজে ব্যস্ত না রেখে আল্লাহর জিকিরে ব্যস্ত রাখা হল। এতে সওয়াব অর্জনের পাশাপাশি গুনাহ থেকেও রক্ষা পাওয়া গেল। তাইতো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সর্বদা আমাদের জিহ্বাকে আল্লাহর যিকির দ্বারা সিক্ত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেন:
لاَ يَزالُ لِسَانُكَ رَطباً مِنْ ذِكْرِ اللهِ
“আল্লাহর জিকিরে তোমার জিহ্বা যেন সর্বদা সিক্ত থাকে।” [তিরমিযী হাসান-রিয়াদুস সালেহিন – ১৪৪৬]

তবে এ কথায় কোন সন্দেহ নাই যে, যিকির ও তাসবীহগুলোর মর্মার্থের দিকে খেয়াল করে পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পাঠ করা অধিক উত্তম।

 খ. রান্না-বান্না, গৃহস্থালির কাজ বা অফিসের কাজ রত অবস্থায়ও মোবাইল, কম্পিউটার, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদিতে কুরআন তিলাওয়াত চালু রাখা জায়েয আছে। এ সময় তিলাওয়াতের প্রতি যথাসম্ভব মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করতে হবে।
তবে স্বাভাবিক অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াতের সময় নিরবতা অবলম্বন করে পূর্ণ মনোযোগ সহকারে তিলাওয়াত শুনা আল্লাহর রহমত প্রাপ্তির অন্যতম কারণ। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
“আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখ এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়।” *সূরা আরাফ: ২০৪)
তবে যেখানে প্রচুর হৈচৈ, হাসাহাসি, খেল-তামাশা হয় বা এমন স্থান যেখানে উচ্চ আওয়াজরে কারণে তেলাওয়াতের আওয়াজ ভালভাবে শোনা যায় না সেখানে কুরআন তিলাওয়াত প্লে করা কুরআনের আদবের পরিপন্থী ও গর্হিত কাজ। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, KSA

Share: