গোলাপে এতো সুগন্ধ হওয়ার কারণ হল তাতে নবীজির এক ফোটা ঘাম মোবারক পড়েছিল এ কথা কি সঠিক

প্রশ্ন: “গোলাপে এতো সুগন্ধ হওয়ার কারণ হল, তাতে নবীজির এক ফোটা ঘাম মোবারক পড়েছিল।” এ কথা কি সঠিক?
উত্তর:
এটি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন আবেগময় কথা। বাস্তবতা হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার বুকে আগমন করার পূর্বেও গোলাপের ঘ্রাণ ছিল।
কোন গোলাপের উপরে তাঁর ঘাম পড়েছিল এমন কোন তথ্য হাদিস ভাণ্ডারে নেই। আর যদি পড়েও থাকে তাহলে কেবল ওই গোলাপটি সুগন্ধযুক্ত হওয়ার কথা। পৃথিবীর সকল গোলাপ কিংবা এযুগের গোলাপে তার প্রভাব থাকার কথা নিতান্তই অযৌক্তিক ও হাস্যকর।
গোলাপের মধ্যে রাসুল আল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ঘাম পড়ার কারণে যদি সুগন্ধ হয়ে থাকে তাহলে অন্যান্য সুগন্ধযুক্ত ফুলে কার ঘাম পড়েছিল?!!
বরং সঠিক কথা হল ফুলের সৌন্দর্য, সুগন্ধি, মহনীয় রূপ এগুলো মহান আল্লাহর বিশেষ দান এবং তাঁর অপরূপ শৈল্পিক সৃষ্টি নিদর্শন। পৃথিবীতে যখন তিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন তখনই তার মধ্যে এই মন মাতানো সৌরভ ও মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছেন।
তার এ সকল নেয়ামতের কথা চিন্তা করলে কৃতজ্ঞতায় তার প্রতি আমাদের মস্তক নত হয়ে আসে। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ ও সুকৌশলী মহান সৃষ্টিকর্তা।
উল্লেখ্য যে, কবি নজরুল ইসলামের নিম্নোক্ত বিখ্যাত কবিতাতেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে এমন আবেগী কথাবার্তা বলা হয়েছে যেগুলো মূলত দলিল বহির্ভূত। কবিতাটি হল:
“মোহাম্মদ নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে।
তাই কি রে তোর কণ্ঠের গান এমন মধুর লাগে?!
ওরে গোলাব নিরিবিলি,
(বুঝি) নবীর কদম ছুঁইয়েছিলি।
(তাই) তাঁর কদমের খোশবু আজ ও তোর আতরে জাগে।।
মোর নবীরে লুকিয়ে দেখে
তাঁর পেশানির জ্যোতি মেখে
ওরে ও চাঁদ, রাঙ্গলী কি তুই গভীর অনুরাগে?!
ওরে ভ্রমর, তুই কি প্রথম
চুমেছিলি নবীর কদম?
আজও গুনগুনিয়ে সেই খুশী কি জানাস রে গুলবাগে।।”
এই কবিতায় কবি নিতান্তই ভক্তি ও ভালোবাসা আতিশয্যে এসব কথা কল্পনা করেছেন। কিন্তু বাস্তবে তা কোন দলিল বা হাদিস নির্ভর কথা নয়।
সুতরাং এই কবিতাও যেন আমাদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে সে ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরি।
মোটকথা, ইসলাম সম্পর্কে বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রশংসা ও ভালোবাসা প্রকাশের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা নিষিদ্ধ। তিনি নিজেই হাদিসে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। তাই এই জাতীয় আবেগ তাড়িত ও ভিত্তিহীন কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরনের বাড়াবাড়ি ও দলিল বহির্ভূত কথাবার্তা থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
উত্তর দাতা:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

Share: