প্রশ্ন: কোনও ব্যক্তি যদি মুখ ফসকে/ রাগের বশে/ না বুঝে কোনও কুফরি কথা বলে ফেলে তাহলে তার করণীয় কি? সে কি কাফের হয়ে যাবে?
উত্তর:
কোন ইমানদার ব্যক্তি হঠাৎ মুখ ফসকে অসতর্কতা বশত: কুফরি কথা উচ্চারণ করে ফেললে কাফের হবে না ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা বলেন,
رَبَّنا لا تُؤاخِذنا إِن نَسينا أَو أَخطَأناّ
“হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা যদি ভুলে যাই কিংবা হঠাৎ অনিচ্ছাবশত: কোন ভুল করে ফেলি তবে আমাদেরকে ধরিও না।” [সূরা বাকারা: ২৮৬]
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
«إِنَّ اللَّهَ قَدْ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ ، وَالنِّسْيَانَ ، وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ».
“আমার উম্মতের হঠাৎ ঘটে যাওয়া ভুল, স্মরণ না থাকার কারণে ঘটে যাওয়া অন্যায় এবং জোরজবরদস্তি করে কৃত অপরাধকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।” [ইবনে মাজাহ: ২০৪৩; সহীহ ইবন হিব্বান: ৭১৭৫, বায়হাকি-হাসান]
তাছাড়া নিম্নোক্ত হাদিসটি দেখুন, একজন তওবা কারী ব্যক্তি আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে কুফরি কথা উচ্চারণ করে ফেলেছিল কিন্তু তারপরও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে কাফের বলেন নি। সহীহ মুসলিমের বর্ণিত হয়েছে,
لَلَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِينَ يَتُوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتِهِ بِأَرْضِ فَلَاةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فَأَيِسَ مِنْهَا فَأَتَى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِي ظِلِّهَا قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ فَبَيْنَا هُوَ كَذَلِكَ إِذَا هُوَ بِهَا قَائِمَةً عِنْدَهُ فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ اللَّهُمَّ أَنْتَ عَبْدِي وَأَنَا رَبُّكَ أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ
“বান্দার তওবাতে আল্লাহ তোমাদের ঐ ব্যক্তি থেকে অধিক আনন্দিত হন, যে বিজন মরু প্রান্তরে তার উট হারিয়ে ফেলল। যাতে তার খাদ্য-পানীয় ছিল। উট হারানো কারণে হতাশ হয়ে গাছের ছায়ায় এসে শুয়ে পড়ল। এমন পরিস্থিতিতে সে হঠাৎ দেখতে পেল তার উট তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। তখন সে উটের লাগাম ধরে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে বলতে লাগল, “হে আল্লাহ,তুমি আমার বান্দা আমি তোমার প্রভু!” অতি আনন্দের কারণে সে এভাবে ভুল কথা বলে ফেলল।” [সহীহ মুসলিম, অনুচ্ছেদ: তওবা করার প্রতি উৎসাহ দান এবং এতে খুশি হওয়া, হা/৪৯৩৪, শামেলা]
তবে যখনই বুঝতে পারবে যে, অসতর্কতা বশত: কুফরি কথা বলে বলেছে, তখনই কাল বিলম্ব না করে তওবা করে নিবে। এটা আরও বেশি উত্তম।
নিশ্চয় আল্লাহ পরম দয়ালও ও অতিশয় ক্ষমাশীল।
আর রাগের বশে যদি হিতাহিত জ্ঞানশূন্য (পাগল) হয়ে কুফরি কথা বলে তবে তাহলে কাফের হবে না। কারণ পাগলের কোনও হিসাব নাই। কিন্তু যদি আল্লাহর প্রতি তিক্ত-বিরক্ত, ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ অবস্থায় কুফরি কথা বলে-যেমন: আল্লাহকে গালি দেয়, দীন ইসলামকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বা ইসলামের কোনও বিধানকে অস্বীকার করে ইত্যাদি- তাহলে নি:সন্দেহে তা মারাত্মক অন্যায় ও কুফরি মূলক গুনাহ।
যাহোক, কারো দ্বারা যদি এমনটি ঘটে থাকে তাহলে তার করণীয় হল, লজ্জিত ও অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহর নিকট তওবা-ইস্তিগফার করা এবং নেকির কাজ করা (যেমন: ওজু করে দু রাকআত তওবার সালাত আদায়, দান-সদকা, নফল রোজা ইত্যাদি)। তাহলে দয়াময় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন বলে আশা করা যায়-ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ
“নিশ্চয় নেকির কাজ গুনাহ সমূহ দূর করে দেয়।” (সূরা হুদ: ১১৪)
সাহাবি আবু যর থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
اتّقِ الله حَيْثُمَا كُنْتَ، وَأَتْبِعِ السّيِّئَةَ الحَسَنَةَ تَمْحُهَا
“হে আবু যর! যেখানেই থাক আল্লাহকে ভয় কর এবং কোনও পাপ হয়ে গেলেই নেক আমল কর; তা তোমার পাপ মিটিয়ে দিবে।“ [জামে তিরমিযী, হাদিস ১৯৮৭, সহীহ তারগীব, হা/২০৪২, সনদ হাসান লি গাইরিহী]
আল্লাহ আমাদের জবানকে হেফাজত করুন এবং ইচ্ছাকৃত, অনিচ্ছাকৃত, জেনে-না জেনে, বুঝে-না বুঝে কৃত সকল গুনাহ মোচন করে দিন। আমিন।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
জুবাইল, সৌদি আরব।