প্রশ্ন: কুরবানির দিন কুরবানির পশু জবাই করার আগ পর্যন্ত না খেয়ে থাকার কি কোনো নিয়ম আছে?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: কুরবানি দাতার জন্য কুরবানির দিন ঈদের সালাতের পূর্বে কোন কিছু না খাওয়া সুন্নত। বরং ঈদের সালাত শেষে খাওয়া উত্তম। বিশেষ করে যদি ঈদের সালাত শেষে কুরবানির গোশত খাওয়া হয় তাহলে তা অধিক উত্তম।
– হাদিসে এসেছে, বুরাইদা রা. থেকে বর্ণিত,
كان النبي صلى الله عليه وسلم لا يخرج يوم الفطر حتى يأكل، ولا يأكل يوم الأضحى حتى يرجع فيأكل من أضحيته
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না আর ঈদুল আজহার দিন ঈদের সালাতের পূর্বে খেতেন না। সালাত থেকে ফিরে এসে কুরবানির গোশত খেতেন।” [শাইখ আলবানী রচিত, সহীহ ইবনে মাজাহ]
– অন্য বর্ণনায় এসেছে, বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«كَانَ النَّبِيُّ صلَّى الله عليه وسلَّم لَا يَخْرُجُ يَوْمَ الفِطْرِ حَتَّى يَطْعَمَ، وَلَا يَطْعَمُ يَوْمَ الأَضْحَى حَتَّى يُصَلِّيَ
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন না খেয়ে বের হতে না। আর ঈদুল আজহার দিন খেতেন না সালাত শেষ করার আগে।” [সহিহ মিশকাতুল মাসাবিহ, হা/১৪৪০]
– অন্য বর্ণনায় এসেছে,
وَكَانَ لَا يَأْكُلُ يَوْمَ النَّحْرِ حَتَّى يَرْجِعَ
“তিনি কোন কিছু খেতেন না (ঈদগাহ থেকে) থেকে ফিরে আসার পূর্বে।” [সহিহ ইবনে মাজাহ]
🔷 “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম কুরবানির কলিজা খেতেন” মর্মে বর্ণিত হাদিসটি সহিহ নয়: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের মাঠ থেকে ফিরে এসে সর্বপ্রথম কুরবানির কলিজা খেতেন-মর্মে যে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে তা সনদগতভাবে দুর্বল। যেমনটি শাইখ আলবানি সহ অনেক মুহাদ্দিস বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন।
وَكَانَ إِذَا رَجَعَ أَكَلَ مِنْ كَبِدِ أُضْحِيَتِهِ
ضعَّف الألبانيُّ هذه الزيادةَ كما في «سُبُل السلام» بتعليقاته عليه (٢/ ٢٠٠) حيث قال: «هذه الزيادةُ ضعيفةٌ؛ لأنها مِنْ رواية عقبة بنِ الأصمِّ عن ابنِ بريدة؛ وهو عقبة بنُ عبد الله الأصمِّ: ضعيفٌ، كما في «التقريب»».
🔷 ঈদের মাঠ থেকে ফিরে আসার পর কুরবানি গোশত খাওয়ার হেকমত কী?
বিজ্ঞ আলেমগণ বলেন, এর একটি কারণ হতে পারে, গরিব-অসহায় মানুষের সাথে একাত্মতা প্রকাশ। কারণ অনেক গরিব মানুষের বাড়িতে কোন খাবার থাকে না। অতঃপর ঈদের সালাতের পরে মানুষ তাদেরকে কিছু কুরবানির গোশত দান করলে তারা সেখান থেকে খেতে পারে। পক্ষান্তরে ঈদুল ফিতরের বিষয়টি ভিন্ন। ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের আগেই তারা জাকাতুল ফিতর হিসেবে প্রাপ্ত খাদ্যদ্রব্য থেকে খাবার গ্রহণ করতে পারত। অথবা এর কারণ, আল্লাহ তাআলা যেহেতু কুরবানি করার তৌফিক দান করেছেন তার শুকরিয়া হিসেবে এবং আল্লাহ কুরবানির গোশত খাওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে তিনি সর্বপ্রথম কুরবানির গোশত খেতেন। যেমন: আল্লাহ বলেন,
فَكُلُواْ مِنۡهَا وَأَطۡعِمُواْ ٱلۡبَآئِسَ ٱلۡفَقِيرَ
“অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুঃস্থ-অভাবগ্রস্থকে আহার করাও।” [সূরা হজ ২৮] (আল্লামা ফারকুশ এর রচনা থেকে)
🔸প্রশ্ন: যে কুরবানি দিবে তার জন্য নাকি পরিবারের সবার জন্য এটা সুন্নত?
🔸উত্তর: যে ব্যক্তি কুরবানি করবে তার জন্য এই বিধান প্রযোজ্য। হাদিসের ভাষা থেকে এটাই স্পষ্ট হয়।
সুতরাং যে ব্যক্তি কুরবানি করবে না সে ঈদের পূর্বে খেতে পারে। ইমাম যাইলাঈ তাবঈনুল হাকায়েক গ্রন্থে, আল্লামা মোবারক পূরী তুহফাতুল আহওয়াযী গ্রন্থে এবং আরও একদল আলেম হাদিসের আলোকে উপরোক্ত মত ব্যক্ত করেছেন।)
তাদের বক্তব্যগুলো নিম্নরূপ:
قال الزيلعي في تبيين الحقائق: هذا في حق من يضحي ليأكل من أضحيته، أما في حق غيره فلا..
وفي تحفة الأحوذي: وقد خصص أحمد بن حنبل استحباب تأخير الأكل في عيد الأضحى
وقال في كشاف القناع: وكان لا يأكل يوم النحر حتى يرجع، فيأكل من أضحيته، وإذا لم يكن له ذبح لم يبال أن يأكل
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।