কুরআন মাজীদকে মাটিতে রাখার বিধান কী

প্রশ্ন: কুরআন মাজীদকে অল্প বা দীর্ঘ সময়ের জন্য মাটিতে রাখার কী হুকুম? তা কি মাটি থেকে অন্তত এক বিঘত উঁচুতে রাখা আবশ্যক?
উত্তর:
وضعه على محل مرتفع أفضل مثل الكرسي أو الرف في الجدار ونحو ذلك مما يكون مرفوعا به عن الأرض، وإن وضعه على الأرض للحاجة لا لقصد الامتهان على أرض طاهرة بسبب الحاجة لذلك ككونه يصلي وليس عنده محل مرتفع أو أراد السجود للتلاوة فلا حرج في ذلك إن شاء الله، ولا أعلم بأسًا في ذلك، لكنه إذا وضعه على كرسي أو على وسادة ونحو ذلك أو في رف كان ذلك أحوط، فقد ثبت عنه ﷺ عندما طلب التوراة لمراجعتها بسبب إنكار اليهود حد الرجم طلب التوراة وطلب كرسيًا ووضعت التوراة عليه، وأمر من يراجع التوراة حتى وجدوا الآية الدالة على الرجم وعلى كذب اليهود.
فإذا كانت التوراة يشرع وضعها على كرسي لما فيها من كلام الله سبحانه، فالقرآن أولى بأن يوضع على الكرسي لأنه أفضل من التوراة.

والخلاصة: أن وضع القرآن على محل مرتفع ككرسي، أو بشت مجموع ملفوف يوضع فوقه، أو رف في جدار أو فرجة هو الأولى والذي ينبغي، وفيه رفع للقرآن وتعظيم له واحترام لكلام الله، ولا نعلم دليلا يمنع من وضع القرآن فوق الأرض الطاهرة الطيبة عند الحاجة لذلك[

“কুরআন মাজীদকে উঁচু জায়গায় রাখা উত্তম, যেমন একটি চেয়ার, দেওয়ালের তাক বা অন্য কোনো উঁচু স্থান যেখানে এটি সম্মানের সঙ্গে রাখা যায়। তবে যদি কেউ প্রয়োজনে, অবমাননার উদ্দেশ্য ছাড়া পাক মাটির উপর কুরআন মাজীদকে রাখে তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ। যেমন যদি কেউ সালাত আদায় করে এবং তার কাছে কুরআন রাখার জন্য কোনো উঁচু স্থান না থাকে অথবা সে তিলাওয়াতের সিজদার জন্য বসে থাকে তাহলে এটি মাটিতে রাখা জায়েজ হবে।

তবে কুরআনকে চেয়ার, কুশন, বালিশ, তাক বা অন্য কোনো উঁচু স্থানে রাখা উত্তম ও নিরাপদ। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইহুদিদের পাথর নিক্ষেপের শাস্তি (রজম) অস্বীকার করার জন্য তাদের তাওরাত আনতে বলেন তখন তিনি একটি চেয়ারও আনতে বলেন এবং তাওরাতকে সেটির ওপর রাখা হয়। এরপর তিনি এক সাহাবিকে তাওরাত পড়তে বলেন। অতঃপর তারা সেই আয়াত খুঁজে পান যা রজমের শাস্তির সমর্থনে ছিল। ফলে ইহুদিদের মিথ্যাচার প্রমাণিত হয়।

যেহেতু তাওরাতের মতো কিতাবের জন্যও যার মধ্যে আল্লাহর কালাম আছে চেয়ারে রাখা শরিয়তসম্মত তাই কুরআন মাজীদকে চেয়ারে রাখা আরও বেশি উপযুক্ত। কারণ এটি তাওরাতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ।

মোটকথা, কুরআন মাজীদকে উঁচু স্থানে রাখা যেমন একটি চেয়ার, কুশন, তাক বা দেওয়ালের কোন ফাঁকা স্থানে রাখা উত্তম। এটি কুরআনের সম্মান ও মহত্ব বজায় রাখে। তবে প্রয়োজনে পরিষ্কার পাক-পবিত্র মাটিতে রাখার অনুমতি আছে। একে হারাম বলা যাবে না। [সূত্র: শাইখ ইবনে বায (রহ.), ‘নূরুন আলাদ দারব” প্রোগ্রামের ৭ নম্বর ক্যাসেট মাজমূ’ ফাতাওয়া ও মাকালাত শাইখ ইবন বায (৯/২৮৮)]

❑ শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে সালিহ আল উসাইমিন রহ. বলেছেন:

ومن النصيحة لكتاب الله عز وجل : أن لا تضعه في موضع يمتهن فيه ، ويكون وضعه فيه امتهاناً له ، كمحل القاذورات ، وما أشبه ذلك ، ولهذا يجب الحذر مما يصنعه بعض الصبيان إذا انتهوا من الدروس في مدارسهم ، ألقوا مقرراتهم والتي من بينها الأجزاء من المصحف في الطرقات أو في الزبالة أو ما أشبه ذلك ، والعياذ بالله .
وأما وضع المصحف على الأرض الطاهرة الطيبة : فإن هذا لا بأس به ، ولا حرج فيه ؛ لأن هذا ليس فيه امتهان للقرآن ، ولا إهانة له ، وهو يقع كثيراً من الناس إذا كان يصلي ويقرأ من المصحف وأراد السجود يضعه بين يديه : فهذا لا يعدُّ امتهانا ، ولا إهانة للمصحف ، فلا بأس به .
” شرح رياض الصالحين ” ( 1 / 423 ) دار ابن الهيثم ، شرح حديث رقم ( 181

“আল্লাহর কিতাবের প্রতি সম্মান ও দায়িত্ববোধের অংশ হলো, এটিকে এমন স্থানে না রাখা যেখানে কুরআনের সম্মানহানী হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যেমন ময়লা-আবর্জনার স্থান বা অপবিত্র জায়গা।

অনেকে শিশু স্কুল থেকে ফেরার পর তাদের বই-খাতা-যার মধ্যে কুরআনের অংশও থাকতে পারে-রাস্তা বা আবর্জনার মধ্যে ফেলে দেয় এটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ। (আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন।)”

“তবে যদি পবিত্র ও পরিষ্কার মাটিতে মাটিতে কুরআন মাজীদ রাখা হয় তাহলে এতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ এটি কোনোভাবেই কুরআনের অবমাননা বা অশ্রদ্ধার শামিল নয়। অনেক মানুষ নামাজ পড়ার সময় মুসহাফ (কুরআনের কপি) থেকে তিলাওয়াত করেন এবং সিজদার সময় তা সামনে রেখে দেন এটি কোনোভাবেই অসম্মানজনক নয়। তাই এতে কোনো বাধা নেই।” [সূত্র: শারহে রিয়াদুস সালিহীন (১/৪২৩), দার ইবনুল হাইসম, হাদিস নং ১৮১]

❑ শাইখ আব্দুল্লাহ ইবনে জিবরিন (রহ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:

“পাক-পবিত্র মাটিতে বা জায়নামাজের ওপর কুরআন রাখা কি বৈধ?”

উত্তরে তিনি বলেন:

الأوْلى أن يوضع على مكان مرتفع حتى يتحقق رفعه حسّاً ومعنى ، قال الله تعالى : ( مرفوعة مطهرة ) فإذا احتجتَ إلى وضعه : فضعْه على مكان مرتفع ولو قليلاً ، فإذا لم يتيسر : جاز وضعه على الأرض على فراشٍ طاهرٍ ، ونحوه ، وينزَّه المصحف بأن يوضع على مكان منخفض أو على مكان متنجس أو على التراب ؛ لما فيه من الاحتقار له ، وإذا احتيج إلى وضعه على فراش طاهر : فلا بأس بذلك ، مع الحرص على رفعه حسّاً ومعنى .
” فتاوى إسلامية ” ( 4 / 15 )

“উত্তম হলো কুরআনকে উঁচু স্থানে রাখা, যাতে এটি বাহ্যিকভাবেও ঊর্ধ্বে থাকে।

আল্লাহ তাআলা বলেন:

مَرْفُوعَةٍ مُّطَهَّرَةٍ

“(কুরআন) লিখিত আছে সম্মানিত উচ্চ পবিত্র পত্রসমূহে।” [সূরা আবাসা: ১৪]

“তবে প্রয়োজনে যদি উঁচু স্থান না পাওয়া যায় তাহলে পরিষ্কার বিছানা বা জায়নামাজের ওপর রাখা জায়েজ। তবে এটিকে নিচু জায়গায়, নাপাক স্থানে বা সরাসরি মাটিতে না রাখা উচিত। কারণ এতে কুরআনের সম্মানহানি হতে পারে। যদি পবিত্র স্থান ছাড়া অন্য কোথাও রাখার উপায় না থাকে তবে কুশন বা পরিষ্কার কাপড়ের ওপর রাখা উত্তম।” [সূত্র: ফাতাওয়া ইসলামিয়া (৪/১৫)]

সারসংক্ষেপ:

✅ উঁচু জায়গায় রাখা উত্তম। তবে প্রয়োজনে পবিত্র স্থান বা জায়নামাজের ওপর রাখা জায়েজ।
🚫 অপবিত্র স্থান, নোংরা জায়গা বা মাটিতে সরাসরি রাখা নিষিদ্ধ। কারণ এতে কুরআনের অবমাননা হতে পারে।▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬
অনুবাদক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।

Share: