কুরআন কারিম দান করার নিয়ত করার পর নিয়ত পরিবর্তন করে তার মূল্য অসুস্থ লোকের চিকিৎসা বাবদ দান করার বিধান

প্রশ্ন: আমি একটি কুরআন কারিম দান করার নিয়ত করেছি। এখন আমি যদি কুরআন না দিয়ে সেই পরিমাণ টাকা কোন অসুস্থ লোককে দান করি তাহলে কি কোন সমস্যা হবে? এতে আমার নিয়ত কি পূরণ হবে?
উত্তর:
আপনি যদি একটি কুরআন দান করার নিয়ত করে থাকেন তারপর যদি মনে হয় কোন অসহায় অসুস্থ ব্যক্তিকে চিকিৎসা করার জন্য আর্থিকভাবে সাহায্য করা এই মুহূর্তে বেশি প্রয়োজন তাহলে আপনি অবশ্যই নিয়ত পরিবর্তন করে সেই টাকাটা তার চিকিৎসার উদ্দেশ্যে দান করতে পারেন। ইসলামি শরীয়তে এতে কোনও বাধা নেই। কেননা নফল ইবাদতের ক্ষেত্রে নিয়ত পরিবর্তন করা জায়েজ আছে।
এতে ইনশাআল্লাহ আপনি দানের সওয়াব পাবেন এবং আপনার নিয়ত পূরণ হবে। নিঃসন্দেহে মানবতার কল্যাণে অর্থ খরচ করা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কাজ।
এ ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত হাদিসটি প্রযোজ্য:
আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মদিনার আনসারি সাহাবিদের মধ্যে আবূ তালহা রা. সর্বাপেক্ষা বিত্তবান ছিলেন। তার সস্পড়ির মধ্যে ‘বায়রুহা’ ছিল সর্বাধিক প্রিয় সম্পদ। সেটি মসজিদুন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্মুখে অবস্থিত ছিল। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে গিয়ে এর সুপেয় পানি পান করতেন। আনাস রা. বলেন,لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ “তোমরা যা ভালবাসো তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা তোমরা কখনো নেকি পাবে না” এ আয়াত নাযিল হলে তখন আবু তালহা রা. রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে বললেন, আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনে বলছেন:
لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ
“তোমরা যা ভালবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পূন্যতা লাভ করবে না।”
‘বায়রুহা’ আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় সম্পদ। অতএব আমি তা আল্লাহর পথে দান করলাম। বিনিময়ে আমি আল্লাহর কাছে নেকী ও সঞ্চয় আশা করি এবং আখিরাতে পুঁজির আশা রাখি। হে আল্লাহর রাসূল, আপনার মর্জি মাফিক আপনি তা সদ্ব্যবহার করুন। এ কথা শুনে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
بَخْ ذَلِكَ مَالٌ رَابِحٌ ذَلِكَ مَالٌ رَابِحٌ قَدْ سَمِعْتُ مَا قُلْتَ فِيهَا وَإِنِّي أَرَى أَنْ تَجْعَلَهَا فِي الأَقْرَبِينَ‏
বাহ! সম্পদটি লাভজনক। সম্পদটি লাভজনক। এ সম্পর্কে তুমি যা বললে, অবশ্যই আমি তা শুনেছি তবে আমার পছন্দ হচ্ছে তা তুমি তোমার আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বণ্টন করে দাও। অতঃপর আবূ তালহা (রাঃ) আত্নীয়-স্বজন ও তার চাচাতো ভাইদের মাঝে তা বণ্টন করে দিলেন।
{সহীহ মুসলিম (ইফাঃ), হাদিস নম্বরঃ [2187], অধ্যায়: ১৩/ যাকাত (كتاب الزكاة), পরিচ্ছদ: ৯. নিকটাত্মীয়, স্বামী, সন্তান-সন্তুতি ও মাতা-পিতার জন্য খরচ করার ফজিলত, যদিও তারা মুশরিক হয়. পাবলিশারঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন}
তবে আল্লাহ তাআলা যদি আপনাকে পর্যাপ্ত সম্পদ দিয়ে থাকেন তাহলে গরীব অসহায় মানুষকে দান করার পাশাপাশি যদি কুরআন কিনে দেওয়ার সামর্থ্য হয় তাহলে সেটাও দিবেন। এতে ইনশাআল্লাহ আপনি দুই দিক থেকেই সওয়াবের অধিকারী হবেন আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ জুবাইল, সৌদি আরব

Share: