প্রশ্ন: এমন কোন হাদিস কি আছে যে মৃত্যুর পরে মানুষ মায়ের পরিচয়ে পরিচিত হবে?
উত্তর:
মৃত্যুর পরে মানুষ মায়ের পরিচয়ে পরিচিত হবে এমন একটি হাদীস পাওয়া যায় কিন্তু সেটি মওজু বা বানোয়াট তথা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নামে মিথ্যাচার। এটা কোন হাদিস নয়।
উক্ত বানোয়াট হাদিসটি নিম্নরূপ:
يدعى الناس يوم القيامة بأمهاتهم سترا من الله عز وجل عليهم موضوع – رواه ابن عدي
“কিয়ামতের দিন লোকদেরকে ডাকা হবে তাদের মায়েদের পরিচয়ে, আল্লাহর পক্ষ হতে তাদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য।” [ইবনে আদি]
এ হাদিসটি জাল।
◈ হাদিসটি কেন জাল তার বিস্তারিত বিবরণ মুহাদ্দিসদের ভাষায়-
এটি ইবনে আদি [২/১৭] ইসহাক ইবনে ইবরাহীম তাবারী হতে বর্ণনা করেছেন, অতঃপর বলেছেন, এ সনদে হাদিসটির ভাষা মুনকার। ইসহাক ইবনে ইবরাহিম মুনকারুল হাদিস।
ইবনে হিব্বান বলেন, তিনি ইবনে ওয়াইনা এবং ফুযায়েল ইবনে আইয়াশ হতে নিতান্তই মুনকার হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি নির্ভরশীলদের উদ্ধৃতিতে জাল হাদিস নিয়ে এসেছেন। আশ্চর্য হবার উদ্দেশ্য ছাড়া তার হাদিস লিখাই হালাল নয়।
হাকিম বলেন, তিনি ফুযায়েল এবং ইবনে ওয়াইনা হতে কতিপয় জাল হাদিস বর্ণনা করেছেন।
ইবনুল জাওযি হাদিসটি “আল-মাওযু’আত” গ্রন্থে [৩/২৪৮] ইবনে আদির সূত্রে উল্লেখ করে বলেছেন, হাদিসটি সহিহ নয়। কারণ ইসহাক মুনকারুল হাদিস।
সুয়ূতী “আল-লাআলী” গ্রন্থে [২/৪৪৯] তার সমালোচনা করে বলেছেন, তাবারানীর নিকট তার অন্য সূত্র আছে। কিন্তু এটির ভাষা হচ্ছে ‘بأمهاتهم’ (তাদের মায়ের নাম ধরে) আর তার (তাবারানীর) ভাষা হচ্ছে ‘بأسمائهم’ (তাদের নাম ধরে)। দুটির মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট।
ইবনে আররাক তার প্রতিবাদ করে বলেছেন (২/৩৮১)- এটি আবু হুযাইফা ইসহাক ইবনে বিশর সূত্রে বর্ণিত, শাহেদ (সাক্ষ্য) হিসাবে সঠিক হবে না।
আমি (আলবানী) বলছি, “কারণ শাহেদ (সাক্ষ্য) হওয়ার শর্ত হচ্ছে, দুর্বলতা যেন বেশি শক্তিশালী না হয়। কিন্তু এটি এরূপ নয়। কারণ ইসহাক ইবনে বিশরকে হাদিস জালকারীদের মধ্যে গণ্য করা হয়। যেমনটি ২২৩ নং হাদিসের আলোচনায় গেছে।”
[উৎস: hadithbd-যঈফ ও জাল হাদিস, ১/ বিবিধ]
◈ সঠিক কথা হল, কিয়ামতের দিন মানুষ তার পিতার পরিচয়ে পরিচিত হবে। নিম্নোক্ত হাদীসটি তার প্রমাণ:
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
إِذَا جَمَعَ اللَّهُ الْأَوَّلِينَ وَالْآخِرِينَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرْفَعُ لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ فَقِيلَ هَذِهِ غَدْرَةُ فُلَانِ بْنِ فُلَانٍ
“হাশরের মাঠে আল্লাহ যখন সমস্ত মানুষকে একত্রিত করবেন তখন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতক এবং প্রতারকের জন্য একটি করে নিশানা স্থাপন করা হবে এবং বলা হবে এটি অমুকের পুত্র অমুকের বিশ্বাস ঘাতকতার নিশানা।” [মুসলিম, কিতাবুল জিহাদ।]
এখানে বলা হয়েছে: فُلَانِ بْنِ فُلَانٍ “উমুকের ছেলে উমুক।” আরবিতে فُلَانِ (উমুক) শব্দটি পুরুষ লিঙ্গ।
সুতরাং এখান থেকে স্পষ্ট হয় যে, মৃত্যুর পর মানুষ তার মায়ের পরিচয়ে পরিচিত হবে – এটি সম্পূর্ণ বাতিল কথা। বরং সঠিক কথা হল, মানুষ পরিচিত হবে তার পিতার পরিচয়ে। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।