প্রশ্ন: একজন আরেকজনকে অনেক ভালোবাসে। ছেলের পরিবার ঐ মেয়েকে মানতে নারাজ। কিন্তু মেয়ে এবং ছেলে কেউই কাউকে ছাড়া এক মুহূর্তও ভাবতে পারেনা।
ছেলেকে না পেলে মেয়ে আত্মহত্যাও করতে পারে। এমন অবস্থায় ছেলের করণীয় কি?
উত্তর:
ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ বহির্ভূতভাবে তথাকথিত প্রেমের সম্পর্ক সম্পূর্ণ হারাম এবং শয়তানের ফাঁদ। এই ফাঁদে পড়ে ছেলে ও মেয়ে উভয়ে জিনার দিকে ধাবিত হয়। কামনা-বাসনা সহকারে কথাবার্তা, নির্জনে দেখা-সাক্ষাত, ডেটিং, চ্যাটিং, স্পর্শ, হাসাহাসি, দুষ্টামি সবই হারাম।
আল্লাহ আমাদেরকে জিনার নিকটবর্তী হতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَىٰ ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
“আর জিনার কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।”(সূরা ইসরা: ৩২)
তবে দয়াময় আল্লাহ বৈধ উপায়ে বিয়ের মাধ্যমে নিজেদের ভালবাসা প্রকাশ ও জৈবিক চাহিদা মেটানোর সুযোগ দিয়েছেন। মানুষের কর্তব্য, বিয়ের পূর্বে হারাম সম্পর্কের দিকে পা না বাড়িয়ে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিয়ে করা।
এ ক্ষেত্রে পুরুষের জন্য অভিভাবকের অনুমতি নেয়াকে আবশ্যক করা হয় নি। কারণ পুরুষ স্বয়ং সম্পন্ন। পক্ষান্তরে নারীর জন্য অভিভাবকের সম্মতি নেয়াকে অপরিহার্য শর্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া (অধিক বিশুদ্ধ মতানুসারে) বিয়ে শুদ্ধ হবে না। কারণ নারীরা সাধারণত: আবেগ প্রবণ হওয়ায় তারা চক্রান্তকারীদের কবলে পড়ে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কায় থাকে।
সুতরাং ঐ যুবকের কর্তব্য, হারাম সম্পর্ক থেকে তওবা করে মেয়ের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে তাকে বিয়ে করা। এ ক্ষেত্রে ইসলামে যেহেতু তার পিতার নিকট অনুমতি নেয়াকে বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত করা হয় নি সেহেতু সে প্রথমত: তার পিতাকে এই বিয়েতে সম্মত করতে চেষ্টা করবে। কিন্তু তিনি সম্মত না হলে নিজ সিদ্ধান্তে উক্ত মেয়ের পরিবারের সাথে কথা বলে দ্রুত বিয়ে করে প্রয়োজনে আলাদা সংসার গড়তে পারে। এতে দোষের কিছু নাই।
প্রশ্ন আসতে পারে, বাবা-মার সম্মতি ছাড়া ছেলে বিয়ে করলে তো তারা কষ্ট পাবে। এতে কি সে গুনাহগার হবে?
উত্তরে বলব, ইসলাম প্রদত্ত অধিকার পালনের ক্ষেত্রে বাবা-মা যদি কষ্ট পায় এতে সন্তান গুনাহগার হবে না। কেননা সে আল্লাহর নিষিদ্ধ কোন কাজ করছে না।
এ ক্ষেত্রে বাবা-মার কর্তব্য, বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলের পছন্দকে অগ্রাধিকার দেওয়া, তাকে সুপরামর্শ দেয়া ও সহযোগিতা করা।
তবে বাবা, মা, ভাই, বোন সবার সাথে পরামর্শ করে যদি বিয়ে হয় তাহলে তা অতি উত্তম। এতে পারিবারিকভাবে ভেজাল কম হবে। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু ইসলাম তা আবশ্যক করেনি।
দুআ করি, মহান আল্লাহ উক্ত যুবক ও যুবতী দ্বয়কে শয়তানের চক্রান্ত থেকে হেফাজত করুন এবং বিয়ে করার মাধ্যমে বৈধ ও পবিত্র জীবন গঠনের তাওফিক দান করুন। আমীন।
———————
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।।