প্রশ্ন: হজরত উমর রা. এর জ্ঞান এক পাল্লায় আর সমস্ত উম্মতের জ্ঞান আরেক পাল্লায় রাখা হলে উমর রা. এর জ্ঞানই বেশি ভারি হবে।” এ হাদিসটা কি সহিহ?
উত্তর:
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একান্ত ঘনিষ্ঠ সহচর, তাঁর পরে মুসলিম উম্মাহর ২য় কাণ্ডারি, খলিফুতুল মুসলীন, আমিরুল মুমিনীন উমর ইবনুল খাত্তাব রা. দ্বীনের ক্ষেত্রে দৃঢ়তা, জ্ঞানের গভীরতা ও বিচক্ষণতায় ছিলেন এক অনন্য কালপুরুষ। তাই তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ব্যাপারে বলেছেন:
لَوْ كَانَ بَعْدِي نَبِيٌّ لَكَانَ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ
“আমার পরে কেউ নবি হলে উমর ইবনুল খাত্তাব নবি হতেন।”
( মুসনাদে আহমদ, তিরমিযি, হাকিম ইত্যাদি-উকবা বিন আমের রা. হতে বর্ণিত। ইমাম তিরমিযি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন। অনুরূপভাবে শাইখ আলবানিও)
এ হাদিসটি তাঁর দ্বীনের ক্ষেত্রে দৃঢ়তা ও ইলমের গভীরতা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট।
এ ছাড়াও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর ওহি নাজিলে প্রাক্কালে বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে উমর রা. মতামতের আলোকে প্রায় ১৫টি কুরআনের আয়াত নাজিল হয়েছে (ফাতহুল বারী ১/৫০৫)। যেমন: হিজাব, মাকামে ইবরাহিম, বদরের যুদ্ধবন্দী ইত্যাদি। যা তাঁর মর্যাদার বিশাল স্বাক্ষর বহন করে। পাশাপাশি তার ব্যাপারে আরও বহু হাদিস ও সাহাবীদের মতামত বর্ণিত হয়েছে।
◈◈ উমর রা. এর ইলম (জ্ঞান) এর ব্যাপারে হাদিস:
أَنَّ ابْنَ عُمَرَ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ” بَيْنَا أَنَا نَائِمٌ أُتِيتُ بِقَدَحِ لَبَنٍ، فَشَرِبْتُ مِنْهُ، حَتَّى إِنِّي لأَرَى الرِّيَّ يَخْرُجُ مِنْ أَظْفَارِي، ثُمَّ أَعْطَيْتُ فَضْلِي ”. يَعْنِي عُمَرَ. قَالُوا فَمَا أَوَّلْتَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ” الْعِلْمَ ”.
ইবনু উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, “আমি একবার ঘুমিয়ে ছিলাম। আমার কাছে একটি দুধের পেয়ালা পেশ করা হলে আমি তা থেকে পরিতৃপ্ত হয়ে পান করলাম। তৃপ্তির চিহ্ন আমার নখ দিয়ে প্রকাশ পেতে লাগল। অতঃপর বাকি অংশ অবশিষ্টাংশ উমারকে দিলাম।”
সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল, আপনি এর কী ব্যাখ্যা দিলেন?
তিনি বললেনঃ ইলম (জ্ঞান)।
(সহিহ বুখারী, অধ্যায়: স্বপ্নের ব্যখ্যা প্রদান স্বপ্নে দুধ দেখা ।আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৩৪)
উল্লখ্য যে, নবীদের স্বপ্নও ওহি তথা আল্লাহর প্রত্যাদেশ।
◈◈ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর মন্তব্য:
● মাজমাউয যাওয়ায়ে গ্রন্থে হাইসামি বলেন: আবু ওয়ায়েল থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন:
قال عبد الله بن مسعود: لو أن علم عمر بن الخطاب وضع في كفة الميزان، ووضع علم الأرض في كفة لرجح علم عمر
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, “যদি ওমর ইবনুল খাত্তাব এর জ্ঞানকে এক পাল্লায় রাখা হয় এবং বিশ্ববাসীর জ্ঞানকে আরেক পাল্লায় রাখা হয় তাহলে উমরের ইলম (জ্ঞান) ভারী হবে।”
● তিনি আরো বলেন:
إني لأحسب عُمر قد ذهب بتسعة أعشار العلم (رواه الطبراني بأسانيد ورجال هذا رجال الصحيح غير أسد بن موسى وهو ثقة)
“আমার ধারণা, উমর জ্ঞানের দশ ভাগের নয় ভাগ নিয়ে গেছেন।” (তবারানী একাধিক সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। এর বর্ণনাকারীগণ সহিহ বুখারীর বর্ণনাকারী। তবে আসাদ বিন মূসা বিশ্বস্ত)
আল্লাহ তাআলা এই দিগ্বিজয়ী মহাবীর মুসলিম জাতির গর্ব ক্ষণজন্ম মহাপুরুষ উমর ইবনুল খাত্তাব রা. কে মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে উত্তম বিনিময় দান করুন। রাযিআল্লাহু আনহু-আল্লাহ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হোন।
❑ উল্লেখ্য যে, উমর রা. এ জ্ঞানের গভীরতা, বিচক্ষণতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাহাবিদের মধ্যে অনন্য বৈশিষ্টের অধিকারী হওয়ার পরও কোন কোন ক্ষেত্রে বা বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্য জন তার চেয়েও বেশি জ্ঞান রাখতেও পারেন বা অন্যের মতামতটা বেশি শক্তিশালী হতে পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক।
উদহারণ স্বরূপ:
– যাকাত অস্বীকার কারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার ঘটনায় খলিফতুল মুসলেমিন আবু বকর রা. ও উমর রা. এর মাঝে দ্বিমত সৃষ্টি হলে পরবর্তীতে আবু বকর রা. এর মতামতটি অধিক বিশুদ্ধ বলে প্রমাণিত হয় এবং তিনি তা মেনে নেন।
– নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুআয বিন জাবাল রা. কে হালাল-হারাম বিষয়ে এই উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী বলে সম্বোধন করেছেন। তিনি তাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন:«أعلم أمتي بالحلال والحرام»
সুতরাং এ বিষয়ে তিনি আবু বকর রা., উমর রা. সহ অন্য সকল সাহাবির থেকে অধিক পারদর্শী ছিলেন।
– হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে আবু হুরায়রা রা. এর কোন তুলনা নেই।
– কুরআনের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ইবনে আব্বাস রা. অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
এভাবে বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন জন বেশি পারদর্শী ছিলেন। কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় উমর রা. এর ব্যাপারে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ এ মত ব্যক্ত করেছেন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬◖◯◗▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাই দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।