প্রশ্ন: অনেকে বিভিন্ন রোগীদের ডাক্তার দেখানো, চেকআপ সহ অন্যান্য সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে। এতে তারা কিছু কমিশন পায়। এটা হালাল নাকি হারাম?
উত্তর:
রোগী সংগ্রহ করা, রোগীর চেকআপ করা, রোগীর সেবা করা, ডাক্তার দেখানো, ডাক্তারকে সাহায্য-সহযোগিতা করা ইত্যাদি হালাল কাজ। সুতরাং এজন্য হাসপাতাল বা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের নিকট চুক্তিভিত্তিক কমিশন নেয়ায় কোনও আপত্তি নেই। এমনকি রোগীকে সহায়তা বাবদ তার নিকট পারিশ্রমিক নেয়ার চুক্তি হয়ে থাকলে তাতেও কোন সমস্যা নেই। কেননা তা হল তার শ্রম ও সেবার বিনিময়ে পারিশ্রমিক। তবে শর্ত হল:
❂ হাসপাতাল/ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সাথে বা সেবা গ্রহণকারীর সাথে কৃত চুক্তি লঙ্ঘন করা যাবে না। যেমন: গোপনে একই সাথে একাধিক হাসপাতাল/ক্লিনিকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কাজ করা।
❂ কোন রোগীর সাথে মিথ্যা কথা বলা বা প্রতারণা করা যাবে না। যেমন: ডাক্তার বা হাসপাতাল/ক্লিনিক সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রোগীকে সেখানে চিকিৎসা নেরার জন্য প্ররোচিত করা।
❂ ওয়াদা খেলাফ করা যাবে না,
❂ বিপদগ্রস্ত মানুষের নিকট ছলে-বলে-কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নেয়া যাবে না।
❂ দেশের প্রচলিত আইন বিরোধী কোন কাজে যুক্ত হওয়া যাবে না (যতক্ষণ তা শরিয়া বিরোধী কিছু না হয়)।
এসব শর্ত সাপেক্ষে নির্ধারিত সেবা ও শ্রমের বিনিময়ে নির্ধারিত কমিশন ভিত্তিক যে কোন হালাল কাজ করা জায়েজ। কেননা এখানে পরিশ্রমের বিনিময়ে অর্থ গ্রহণ করা হচ্ছে । হাদিসে এসেছে,
◈ রিফাআহ বিন রাফি রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে প্রশ্ন করা হল,
أَيُّ الْكَسْبِ أَطْيَبُ؟ قَالَ: «عَمَلُ الرَّجُلِ بِيَدِهِ، وَكُلُّ بَيْعٍ مَبْرُورٍ»
“কোন উপার্জন সবচেয়ে পবিত্র? উত্তরে তিনি বলেছেন, “নিজ হাতের উপার্জন এবং সর্ব প্রকার সৎ ব্যবসা।” (সহিহ, বাযযার ২য় খণ্ড ৮৩ পৃষ্ঠা, হাকিম ২য় খণ্ড ১০ পৃষ্ঠা। সহিহ, তাওযিহুল আহকাম ৮/২১৮)
◈ তাছাড়া ইসলামের দৃষ্টিতে যে কোনও সেবা ও শ্রমের বিনিময়ে পারিশ্রমিক/মজুরি গ্রহণ করা বৈধ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
أَعْطُوا الْأَجِيْرَ أَجْرَهُ قَبْلَ أَنْ يَّجِفَّ عَرَقُه
“তোমরা শ্রমিককে তার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও তার শরীরের ঘাম শুকানোর পূর্বেই।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/২৯৮৭) এ হাদিসটি মুহাদ্দিসদের দৃষ্টিতে সনদগত ভাবে জইফ হলেও এর শ্রমিককে শ্রমের মূল দেয়া প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত হাদিসটি সহিহ-যেটি উক্ত হাদিসের সমার্থবোধক।
◈ হাদিসে কুদসিতে এসেছে-আল্লাহ তাআলা বলেন,
: ثَلَاثَةٌ أَنَا خَصْمُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، رَجُلٌ أَعْطَى بِي ثُمَّ غَدَرَ، وَرَجُلٌ بَاعَ حُرًّا فَأَكَلَ ثَمَنَهُ، وَرَجُلٌ اسْتَأْجَرَ أَجِيرًا فَاسْتَوْفَى مِنْهُ وَلَمْ يُعْطِه أَجْرَهُ
“আমি কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির প্রতিপক্ষ থাকব। তারা হল:
১) যে ব্যক্তি আমার নামে অঙ্গীকার করার পর গাদ্দারি করে (অঙ্গীকার ভেঙ্গে ফেলে)।
২) যে কোনও স্বাধীন মানুষকে (দাস বানিয়ে) বিক্রি করে তার অর্থ ভক্ষণ করে।
৩) আরেক জন হল, সে ব্যক্তি যে কাউকে কর্মচারী বা শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করার পর তার থেকে যথাযথভাবে কাজ বুঝে নিয়েছে অথচ তাকে তার পারিশ্রমিক দেয় নি।”
[সহিহ বুখারি, অধ্যায়: ক্রয়-বিক্রয়, অনুচ্ছেদ: স্বাধীন মানুষকে বিক্রি করার গুনাহ]
আল্লাহ আমাদেরকে হালাল কাজের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে হালাল ভাবে জীবন ধারণের তাওফিক দান করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬◍❂◍▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।