প্রশ্ন: ইবাদত শব্দের অর্থ ও ব্যাখ্যা কি? ব্যবসা, চাকুরী, সাংসারিক কাজ-কারবার ইত্যাদি দুনিয়াবি কাজে কি সওয়াব পাওয়া যায়?
▬▬▬◄✪✪► ▬▬▬
উত্তর: ইবাদত العبادة শব্দের অর্থ: গোলামী বা দাসত্ব করা, আনুগত্য করা, বিনয় প্রকাশ করা ইত্যাদি।
আর পারিভাষিক ব্যাপক অর্থে ইবাদত হল, সকল প্রকার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য ঐ সকল কথা ও কাজ যেগুলো মহান আল্লাহ ভালবাসেন এবং সন্তুষ্ট হন। [শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.]। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ইবাদত তিনটি ক্ষেত্রে বিভক্ত। যথা: অন্তর, মুখের ভাষা এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ।
🌀 উদাহরণ:
▪অন্তর দ্বারা ইবাদত: যেমন, আল্লাহর প্রতি ভয়, ভরসা, ভালবাসা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, আগ্রহ, সৎ নিয়ত, আল্লাহকে মনে মনে স্মরণ করা, সৃষ্টি জীব নিয়ে ভাবা ইত্যাদি।
▪ মুখের ভাষা ও অন্তর দ্বারা ইবাদত: যেমন, তাসবিহ, (সুবহানাল্লাহ), তাহলীল (লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ) ইত্যাদি দুআ ও জিকির পাঠ করা, আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আদায় করা, কুরআন তিলাওয়াত করা ইত্যাদি।
▪ শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও অন্তর দ্বারা ইবাদত: যেমন, সালাত, সিয়াম, যাকাত, হজ্জ, জিহাদ ইত্যাদি ।
এছাড়া আরও অনেক ধরণের ইবাদত রয়েছে যেগুলো আদায়ের মাধ্যম হল, অন্তর, ভাষা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ।
🌀 ইবাদত এমন একটি বিষয়, যাকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ তা’আলা সকল বস্তু সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন:
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِي، مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِي، إِنَّ اللَّهَ هُوَ الرَّزَّاقُ ذُو الْقُوَّةِ الْمَتِينُ
“একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যই আমি জিন ও মানব জাতি সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের কাছে জীবিকা চাইনা এবং এটাও চাইনা যে, তারা আমার আহার্য যোগাবে। আল্লাহ্ তা’আলাই তো জীবিকা দাতা, মহাশক্তির আধার ও পরাক্রান্ত।” [সূরা যারিয়াত: ৫৬-৫৮]
🌀 দুনিয়াবি কাজকর্মে কি নেকি পাওয়া যায়?
মানুষ আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে ইবাদত-বন্দেগি করে যেমন সওয়াব অর্জন করে তেমনি দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্ম যেমন- ঘুমানো, পানাহার, বেচাকেনা, জীবিকার অনুসন্ধান, বিবাহ-শাদি ইত্যাদি- এগুলোর মাধ্যমেও সওয়াব অর্জন করবে যদি তার উদ্দেশ্য হয় যে, এ সকল বৈধ কাজ-কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের কাজে শক্তি অর্জন করবে অর্থাৎ এগুলোর মাধ্যমে সুস্থ ও ভালো থেকে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করবে।
এই সৎ নিয়তের কারণে মানুষ দুনিয়াবি কাজকর্মের মাধ্যমেও সওয়াব অর্জন করবে ইনশাআল্লাহ।
▪ এ ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত হাদিসটি প্রণিধানযোগ্য:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ. قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَأْتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ؟ قَالَ: أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ وِزْرٌ؟ فَكَذَلِكَ إذَا وَضَعَهَا فِي الْحَلَالِ، كَانَ لَهُ أَجْرٌ”
“আর তোমাদের নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাস করাও সদকা। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কেউ যখন যৌন আকাঙ্ক্ষা সহকারে স্ত্রীর সাথে সম্ভোগ করে, তাতেও কি সওয়াব হবে?
তিনি বলেন, “তোমরা জানো না যে, যখন কেউ হারাম পদ্ধতিতে যৌন সম্ভোগ করে তখন সে গুনাহগার হয়!?
সুতরাং অনুরূপভাবে যখন সে ঐ কাজটি হালাল পন্থায় সম্পন্ন করে তখন সে তার সওয়াব পায়।” [মুসলিম: ১০০৬]
সুতরাং প্রতিটি মুমিনের উচিত হবে, দুনিয়াবি সব ধরণের কাজ-কারবার যেমন, খাওয়া-দাওয়াহ, বিবাহ-শাদি, লেখাপড়া, কৃষিকাজ, চাকুরী, ব্যবসা ইত্যাদি দুনিয়াবি কাজকর্মে সৎ নিয়ত পোষণ করা। তাহলে এ সব দুনিয়াবি কাজ করেও সে অর্জন করবে অবারিত সওয়াব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহু আলাম। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
▬▬▬◄✪✪► ▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স: মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।