প্রশ্ন: “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী-রাজাবা ওয়া শা’বানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।” দুআর এ হাদিসটি কি জয়িফ? আর তা কি পাঠ করা যাবে?
উত্তর:
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ
উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা বা-রিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শাবা-না ও বাল্লিগনা রামাযা-ন।”
অর্থ: “হে আল্লাহ তুমি রজব ও শাবানে আমাদেরকে বরকত দাও। আর আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও।” [মুসনাদ আহমাদ ১/২৫৯, হিলইয়াতুল আওলিয়া, তবাকাতুল আসফিয়া] হাদিসটি জয়িফ বা দুর্বল।
● এ হাদিসের সনদে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যার নাম যায়েদাহ বিন আবুর রিকাদ। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারি রহ. বলেন: মুনকারুল হাদিস।
● ইমাম নাসাঈ তার সুনান গ্রন্থে তার নিকট থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করার পর বলেন, “চিনি না এই ব্যক্তি কে?” আর তিনি তার যুয়াফা কিতাবে বলেন, “মুনকারুল হাদিস।” কুনা গ্রন্থে বলেন, “তিনি নির্ভরযোগ্য নন।”
● ইবনে হিব্বান বলেন, “তার বর্ণিত কোন হাদিসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।”
[দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী ফযলি রাজাব, ১২ পৃষ্ঠা। আয যুয়াফাউল কাবীর (২/৮১) তাহযীবুত তাহযীব (৩/৩০)]
➧ জয়িফ সনদে বর্ণিত এ দুআটি কি পাঠ করা যাবে?
দুআর ক্ষেত্রে জয়িফ হাদিস অনুযায়ী আমল করা যায় যদি তার অর্থের মধ্যে কোন সমস্যা না থাকে। কিন্তু উক্ত দুআর ব্যাপারে কথা হল, আমরা রমজান পর্যন্ত পৌছার জন্য এবং রমজানে অধিক পরিমাণে নেক আমল করার তৌফিক কামনা করে দুআ করতে পারি। এতে সমস্যা নাই। সালাফ বা পূর্বসুরীগণ এই দুআ করতেন। মুআল্লা ইবনুল ফযল বলেন,
كانوا يدعون الله تعالى ستة أشهر أن يبلغهم رمضان ، ويدعونه ستة أشهر أن يتقبل منهم
“তারা (সালাফগণ) আল্লাহর কাছে ছয় মাস দুয়া করতেন, তিনি যেন তাদেরকে রমজান পর্যন্ত উপনীত করেন এবং বাকি ছয় মাস দুআ করতেন যেন, (রমজানের ইবাদত-বন্দেগি) কবুল করেন।”
[হাফেজ ইবনে রজব-লাতায়েফুল মায়ারেফ, পৃষ্ঠা নং ১৪৮]
আর বারো মাসের মধ্যে কেবল রজব ও শাবান মাস নয় বরং সারা বছরই আমাদের বরকত প্রয়োজন।
সুতরাং কেবল এই দু মাস নির্দিষ্ট না করে সারা বছরের প্রতিটি দিন বরকত মণ্ডিত হওয়ার জন্য আমরা আল্লাহর দরবারে দুআ করতে পারি।
❑ শাইখ আব্দুল করিম আল খুযাইয়ের (হাফিযাহুল্লাহ) কে প্রশ্ন করা হয়:
“আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শাবানা ও বাল্লিগনা রামাযান।” এ হাদিসটি কি সহিহ?
তিনি বলেন:
” هذا حديث لا يثبت ، لكن إن دعا المسلم بأن يبلغه الله عز وجل رمضان، وأن يوفقه لصيامه وقيامه، وأن يوفقه لإدراك ليلة القدر ، أي بأن يدعو أدعية مطلقة فهذا إن شاء الله لا بأس به
“এটি সহিহ হিসেবে সাব্যস্ত নয়। কিন্তু কোনও মুসলিম যদি এই দুআ করে যে, আল্লাহ যেন তাকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেন এবং সে মাসে সিয়াম ও কিয়াম (রোজা ও তারাবিহ/কিয়ামুল লায়ল ইত্যাদি ইবাদত)-এর তাওফিক দান করেন, লাইলাতুল কদর পাওয়ার তাওফিক দেন। অর্থাৎ যদি সাধারণভাবে দুআ করা হয় (রমজান ছাড়া কেবল রজব, শাবান বা অন্য কোনো মাসকে নির্দিষ্টভাবে নয়) তাহলে ইনশাল্লাহ এতে কোনও সমস্যা নেই।” আল্লাহু আলাম।
– আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।