আমি আমার জীবন নিয়ে হতাশ, অভাবের তাড়নায় মন চায় কাফের হয়ে যাই

প্রশ্ন: মুহতারাম, আমি আমার জীবন নিয়ে অনেক বেশি হতাশ। অভাব আর অভাব। গত তিন বছর ধরে একইভাবে দিন কাটে। কখনো খেয়ে থাকি, কখনো না খেয়ে উপোষ করি। মেলে না তাই খেতে পাই না। কারো কাছে চাইতেও পারি না। গত রমজানের আগে অভাবের তাড়নায় আল্লাহকে অনেক গালমন্দ করেছি। পরে রমজানে আবার তওবা করেছি। কিন্তু তবুও তারপর এক বছর সালাত পড়ি, অনেক কান্না করি ও ক্ষমা চাই। তাহাজ্জুদও পড়ি মাঝে মাঝে। কিন্তু কোন উপকার পাই না। এখন আমার মনে হয়, আল্লাহ অনেক ব্যস্ত! তাই আমাকে তার চোখে পড়ে না। মন চায়, কাফের হয়ে যাই।

গত কয়দিন যাবত সালাত পড়তে একেবারেই মন চায় না। শুনেছি খৃষ্টান হলে নাকি অনেক টাকা পাওয়া যায়। অন্তত কিছু না হোক অভাবটা তো দূর করতে পারবো। আত্মহত্যাও করতে পারি না। আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে ভয় করে। স্ত্রী-সন্তান ও আছে। মানুষের কাছে ঋণী হয়ে গেছি। এগুলো ঋণ পরিশোধ না করে মরতেও পারি না। যে কাজ জানি তাও পাই না। ভারি কাজও করতে পারি না। এখন কী করি? কী করলে আল্লাহ আমাকে দেখবে? আমি ইমানদার হতে পারবো? একটা পথ দেখাবেন, আমি আর পারতেছি না। দয়া করে একটা সমাধান দিন।
এই কথা গুলো আমার মনের কথা; কোন কাল্পনিক নয়।

উত্তর:

আর্থিক অনটন, ক্ষুধা ও দারিদ্রের কারণে আপনি যদি আল্লাহকে গালাগালি শুরু করেন বা আল্লাহর উপর ক্ষোভ ঝাড়েন তাহলে আপনি পরীক্ষায় ফেল করলেন। কেননা আল্লাহ তাআলা বান্দাকে কখনো অর্থ দিয়ে পরীক্ষা করেন আবার কখনো অভাব-অনটনে ফেলে পরীক্ষা করেন। ক্ষুধা-দারিদ্র্য, সম্পদহানি, প্রিয়জন হারানো ইত্যাদি আল্লাহর পরীক্ষা। যেমন: আল্লাহ বলেন,
وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ – الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّـهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ – أُولَـٰئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ
“এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো। তারা সে সমস্ত লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত।” (সূরা বাকারা: ১৫৫, ১৫৬ ও ১৫৭)

সুতরাং সে ব্যক্তিই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে যে যে বিপদ-মুসিবত, রোগ-শোক, ‍সুখ-দুখ, ক্ষুধা-দারিদ্র সর্বাবস্থায় আল্লাহর দিকে ফিরে যায় এবং ধৈর্য ধারণ করে।

তবে ধৈর্য ধারণ করার অর্থ এই নয় যে, চুপচাপ ঘরে বসে আল্লাহকে গালাগালি করা। বরং এই দুনিয়াতে আল্লাহ রিজিকের অসংখ্য-অগণিত রাস্তা খোলা আছে। আপনার কাজ হবে, সেগুলো অনুসন্ধান করে রিজিক সংগ্রহের চেষ্টা করা।
ব্যবসা, কৃষি, চাকরি, হস্তশিল্প, কায়িক পরিশ্রম ইত্যাদি নানা ভাবে জীবন ধারণ করার পথ খোলা আছে। কেউ যদি নিজেকে পবিত্র রাখার উদ্দেশ্যে আল্লাহর জমিনে রিজিক অনুসন্ধান করে তাহলে আল্লাহ তাকে ফিরিয়ে দিবেন না ইনশাআল্লাহ। এটাই আল্লাহর সাধারণ নিয়ম যে, যে চেষ্টা করে সে পায়।
তবে এজন্য প্রয়োজন, ধৈর্য, চেষ্টা, পরিশ্রম, দৌড়ঝাঁপ, বুদ্ধিমত্তা, বিজ্ঞজনদের পরামর্শ গ্রহণ, আল্লাহর উপর নির্ভরতা এবং তার নিকট হালাল রিজিকের জন্য দোয়া।
আল্লাহ আপনাকে হেদায়াতের উপর আমরণ প্রতিষ্ঠিত রাখুন, ঋণ পরিশোধ করার তওফিক দান করুন এবং অতি দ্রূত হালাল রিজিকের সুব্যবস্থা করে দিন। আমীন।
▬▬▬▬▬●●●▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

Share: