অভিভাবকের সম্মতি ব্যতিরেকে ‘কোর্ট ম্যারেজ’ হওয়ার পর কারণ বশত: মেয়েটি অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাইলে কি তার জন্য ১ম স্বামী থেকে তালাক নেয়া এবং ইদ্দত পালন করা আবশ্যক?

প্রশ্ন: এক বোন রিলেশন করে অভিভাবকের অজ্ঞাতসারে কোর্ট ম্যারেজ করে। কিন্তু কিছু দিন যাওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মনোমালিন্য সৃষ্টি হওয়ার কারণে প্রায় দু বছর যাবৎ তারা আলাদা থাকে কিন্তু এখনও তালাক হয় নি।
এ অবস্থায় মেয়েটির ১ম বিবাহ সম্পর্কে অভিভাবক না জানার কারণে তারা মেয়েটিকে অন্যত্র বিয়ে দিতে চায়। তাহলে এ ক্ষেত্রে কি ১ম স্বামী থেকে তালাক নেয়া অত:পর ইদ্দত পালন করা আবশ্যক না কি বিনা তালাকে কেবল অতীত ভুলের জন্য তওবা করে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ হবে? কারণ আমরা জানি, হাদিস অনুযায়ী অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া বিয়ে হলে বিয়ে বাতিল হয়ে যায়।

উত্তর:

 মূল প্রশ্নের উত্তরে যাওয়ার পূর্বে বলব, অধিক বিশুদ্ধ মতানুসারে মেয়ের অভিভাবক এর অনুমতি ব্যতিরেকে বিবাহ শুদ্ধ হয় না। এ মর্মে পর্যাপ্ত হাদিস বিদ্যমান। (এ বিষয়ে আমাদের বিস্তারিত পোস্ট রয়েছে) তবে হানাফি মাযহাবের অভিমত হল, মেয়ের বিবাহে অভিভাবকের অনুমতির প্রয়োজন নাই।
আর আমাদের সমাজের এই হানাফি ফতোয়াই প্রচলিত এবং বাংলাদেশে আইনও এর পক্ষে। যার কারণে ফতোয়া ও আইনগত ভাবে কথিত কোর্ট ম্যারেজ/পালিয়ে বিয়ে করা আমাদের সমাজে দোষণীয় নয়। কিন্তু এর ফলে সমাজে নানা ধরণের সমস্যা ও বিশঙ্খলার জন্ম হচ্ছে।
ছেলে-মেয়েরা গোপনে ‘প্রেম’ করে মেয়ের বাবা বা অভিভাবকের অজান্তে পালিয়ে ‘কোর্ট ম্যারেজ’করে ফেলে। কিন্তু পরবর্তীতে তার অভিভাবক বিষয়টি জানার পর নানা কারণে উভয় পরিবারের মাঝে ধন্ধ-কলহ লেগে যায়। মানসিক কষ্ট বা সামাজিক অপমানবোধ থেকে পরিবারের পক্ষ থেকে মেয়ের উপর নেমে আসে নানা ধরণের নিষেধাজ্ঞা, সম্পর্কচ্ছেদ ও জুলুম-নির্যাতন। পরবর্তীতে উক্ত স্বামী-স্ত্রীর মাঝে কোন সমস্যা সৃষ্টি হলে সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় মেয়েটি। কারণ তখন সে তার অভিভাবক থেকে সাপোর্ট পায় না।
তখন সে একুল-ওকুল উভয় কুল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে।

যাহোক, একজন নারীর নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদার স্বার্থে দ্বীনের এই গুরুত্বপূর্ণ মাসআলায় ১ম অভিমতটি খুবই উপযোগী। দলীলের দিক থেকেও এটি অধিক শক্তিশালী।

 এখন আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলব, যেহেতু উক্ত বিয়েটি হয়েছিলো আমাদের দেশের প্রচলিত ফতোয়া ও আইন অনুযায়ী সেহেতু বিনা তালাকে ঐ মেয়ের অন্য কোথাও বিয়ের সুযোগ নাই।

সুতরাং এ ক্ষেত্রে মেয়ের করণীয় হবে, তার পিতা বা অভিভাবককে তাদের কোর্ট ম্যারেজের বিষয়টি অবহিত করা। তারপর অভিভাবক যদি চায়, তাকে যার সাথে প্রথমে বিবাহ হয়েছিলে পুনরায় তার সাথে শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে বিয়ে দিবে অথবা কোর্ট থেকে তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ পূর্বক যথারীতি ইদ্দত পালন করার পর অন্য কোথাও বিবাহের ব্যবস্থা করবে।
তালাক ও ইদ্দত ব্যতিরেকে অন্য কোথাও বিবাহ দেয়া বৈধ হবে না।
অন্যথায় হানাফি ফতোয়া এবং দেশের প্রচলিত আইনি জটিলতায় পড়ে বিপদ গ্রন্থ হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

কারণ তখন প্রথম স্বামী তাকে তার বৈধ স্ত্রী হিসেবে দাবি করতে পারবে। আর কারো অজানা নয় যে, এটি কত বড় বিশৃঙ্খলার কারণ। তাছাড়া এর সাথে সন্তান-সন্তুতি, মানুষের হক, মোহর, আর্থিক লেনদেন, উত্তরাধিকারী সম্পদ বণ্টন ইত্যাদি বহু কিছু জড়িয়ে আছে। আল্লাহু আলাম।
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথের উপর পরিচালিত করুন। আমীন।
▬▬▬▬✪✪✪▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

Share: