সৎ ও ইমানদার ব্যক্তির দুআ বিলম্বে কবুল হয় আর কাফির ও পাপীষ্ঠ ব্যক্তির দুআ তাড়াতাড়ি কবুল হয়-এ কথা কি সঠিক? (এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসটি সহিহ নয়)
▬▬▬▬◐❂◑▬▬▬▬
প্রশ্ন: ইয়েমেন থেকে এক ভাই এই পত্রটি প্রেরণ করেছেন: (তিনি প্রশ্ন করেছেন) “কোনো মুমিন তার রবকে ডাকলে মহান আল্লাহ বলেন, “হে জিবরাইল! তার দুআ আমার কাছে রেখে দাও আর কাফের যখন দুআ করে তখন সে বলে: হে জিবরাইল! তার প্রয়োজন পূরণ করে দাও। কারণ আমি তার আওয়াজ শুনতে পছন্দ করি না।” (এ হাদিসটি সঠিক কি না) দয়া করে জবাব দিবেন।
উত্তর:
এই হাদিসের কোনও ভিত্তি আছে বলে জানা নাই। আমার কাছে মনে হয় যে, এটি বানোয়াট হাদিস। এর কোন সত্যতা ও ভিত্তি নেই। একজন কাফিরের দুআ আল্লাহর নিকট উত্তোলিত হয় না যতক্ষণ না তার উপর জুলুম করা হয়। কারণ মাজলুমের ডাকে সাড়া দেওয়ার ব্যাপারে (হাদিসে) প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। যেমন: রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
اتَّقِ دَعوةَ المظلومِ؛ فإنَّهُ ليسَ بينَها وبينَ اللَّهِ حجابٌ
“নিপীড়িত মানুষের দুআ থেকে সাবধান হও। কেননা এর ও আল্লাহর মাঝে কোন আবরণ নেই।” [সহিহ তিরমিযি, হা/২০১৪]
মোটকথা, আপনি যে হাদিসটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছেন- তা হল: মুমিনের দুআর ব্যাপারে আল্লাহ্ বলেন, তা আমার কাছে রেখে দাও এবং কাফিরের দুআয় তৎক্ষণাত তার প্রয়োজন পূরণ করা হয়-এর কোনো ভিত্তি নেই।
উত্তর প্রদানে:
শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায রহ.
সৌদি আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতি
[binbaz-dot-org]
এ হাদিসটি অন্য বর্ণনায় এসেছে এভাবে:
إن العبدَ يَدْعُو اللهَ وهو يُحِبُّه، فيقولُ اللهُ عز وجل : يا جبريلُ ! اقْضِ لعبدي هذا حاجتَه وأَخِّرْها، فإني أُحِبُّ أن لا أزالَ أسمعُ صوتَه، وإن العبدَ لَيَدْعُو اللهَ وهو يُبْغِضُهُ، فيقولُ اللهُ عز وجل : يا جبريلُ اقضِ لعبدي هذا حاجتَه وعَجِّلْها، فإني أكرهُ أن أسمعَ صوتَه
رواه الطبراني في ” الأوسط ” ( 8 / 216 ) ، وفيه إسحق بن عبد الله بن أبي فروة ، وهو متروك كما في ” مجمع الزوائد ” ( 10 / 151 ) .
“কোনও বান্দা-যাকে আল্লাহ ভালবাসেন- যখন দুআ করে তখন আল্লাহ বলেন, হে জিবরাইল, আমার এই বান্দার প্রয়োজন করো কিন্তু তা বিলম্বে করবে। কারণ আমি তার আওয়াজ শুনতে ভালবাসি। আর যদি কোনও বান্দা-যাকে আল্লাহ ঘৃণা করেন- দুআ করে তখন আল্লাহ বলেন, “হে জিবরাইল, অনতি বিলম্বে আমার এই বান্দার প্রয়োজন পূরণ করো। কারণ আমি তার আওয়াজ শুনতে অপছন্দ করি।” [জাবের রা. হতে বর্ণিত। ত্বাবারানি আওসাত, ৮/২১৬]
শাইখ আলবানি বলেন, এ হাদিসটি ضعيف جداً “অত্যন্ত দুর্বল।” [সিলসিলা যাইফাহ/২২৯৬]।
এর বর্ণনা সূত্রে ‘ইসহাক বিন আব্দুল্লাহ বিন আবি ফারওয়া’ নামক একজন বর্ণনাকারী আছে। তিনি মুহাদ্দিসদের দৃষ্টিতে متروك ‘পরিত্যাজ্য’। [মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ১০/১৫১]
এ প্রসঙ্গে বর্ণিত নিম্নোক্ত হাদিসটিকে বুসিরি যইফ/দুর্বল বলে চিহ্নিত করেছেন। [সূত্র: ইতহাফুল মাহারা-৬/৪৪২]
إنَّ جِبريلَ مُوكَّلٌ بحاجاتِ العِبَادِ، فإذا دعَا عبْدُه المُؤمِنُ، قال له: يا جِبريلُ، احبِسْ حاجةَ عَبْدي؛ فإنِّي أُحِبُّه وأُحِبُّ صَوتَه، وإذا دعاهُ عبْدُه الكافِرُ، قال: يا جِبريلُ، اقْضِ حاجةَ عَبْدي هذا؛ فإنِّي أبْغَضُهُ وأبغَضُ صَوتَهُ.
الراوي:جابر بن عبدالله المحدث:البوصيري المصدر:إتحاف الخيرة المهرة الجزء أو الصفحة:6/442 حكم المحدث:إسناده ضعيف
❑ এ হাদিসটির মমার্থ সঠিক নয়:
এ হাদিসটির মমার্থ সঠিক নয়। কারণ কারও দুআ তৎক্ষণাত কবুল হলে, তার মনে সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে যে, সে তাহলে আল্লাহর গোস্বাভাজন- আল্লাহ তার আওয়াজ শুনতে পছন্দ করেন না। অথবা এর বিপরীতটা। কোনও পাপীষ্ঠ ব্যক্তির দুআ বিলম্বে কবুল হলে, তার অর্থ এই নয় যে, আল্লাহ তাকে খুব ভালবাসেন এবং তার আওয়াজ শুনতে ভালবাসেন। অথচ এই জাতীয় কথা হাদিস পরিপন্থী। কেননা হাদিসে বর্ণত হয়েছে,
قَالَ أَبُو سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَدْعُو ، لَيْسَ بِإِثْمٍ وَلا بِقَطِيعَةِ رَحِمٍ ، إِلا أَعْطَاهُ إِحْدَى ثَلاثٍ : إِمَّا أَنْ يُعَجِّلَ لَهُ دَعْوَتَهُ ، وَإِمَّا أَنْ يَدَّخِرَهَا لَهُ فِي الآخِرَةِ ، وَإِمَّا أَنْ يَدْفَعَ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَهَا ، قَالَ : إِذًا يكثرِ ، قَالَ : اللَّهُ أَكْثَرُ
আবু সাঈদ আল-খুদরি রা. থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে কোন মুসলিম ব্যক্তি পাপাচার বা আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার দুআ ব্যতীত যে কোন দুআ করলে আল্লাহ তাকে তিনটি জিনিসের যে কোন একটি দান করেন। যথা:
❖ ১. হয় দ্রুত তার দুআ কবুল করেন,
❖ ২. অথবা তা তার পরকালের জন্য সঞ্চিত রাখেন,
❖ ৩. অথবা তার থেকে সমপরিমাণ কোন অকল্যাণ দূর করেন।
এক ব্যক্তি বললো, তাহলে সে তো অধিক পরিমাণে দুআ করতে পারে। তিনি বলেন, “আল্লাহ তার চেয়েও অধিক দান কারী।” [তিরমিযী, আহমদ, হাকিম, তহাবি-সহিহ তারগিব, হা/ ১৬৩৩]
এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়, আল্লাহ তাআলা তাঁর হেকমত অনুযায়ী বান্দার দুআ কবুল করেন। কখনো তৎক্ষণাৎ কবুল করেন-কখনও বিলম্বে করেন।
সুতরাং ’আল্লাহ নেককার মুমিন ব্যক্তির দুআ বিলম্বে কবুল করেন আর কাফের বা পাপীষ্ঠের দুআ তাড়াতাড়ি কবুল করবেন’-এমন কথা সঠিক নয়। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◐❂◑▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
#abdullahilhadi