প্রশ্ন: আমি ফুটপাত এ ব্যবসার করি। এটা কি হারাম?
উত্তর:
রাস্তার দু পাশের ফুটপাত (footpath) এ ব্যবসা ও ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েজ আছে দুটি শর্ত সাপেক্ষে। যথা:
◈ ১ম: তা যেন পথিকের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি না করে বা কারও ক্ষতির কারণ না হয়:
কিন্তু বাস্তবতা হল, রাস্তা সংলগ্ন অনেক দোকানদার দোকানের সামনের ফুটপাথে দোকানের মালামাল সাজিয়ে বিক্রয় করে অনেকে আবার পুরাদস্তুর দোকান ঘর বানিয়ে ফেলে-যেন তা তার নিজস্ব সম্পত্তি! এভাবে ফুটপাত দখল করে ভাসমান দোকান বসিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। সড়কের দুই পাশের ফুটপাতে ফলমূল, মনিহারি, চটপটি, হালিম, চানাচুর, তৈজসপত্র, শাকসবজি, কাপড়, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান ইত্যাদি ভাসমান দোকানপাট গড়ে উঠায় সড়কে প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকে। বিশেষ করে শহরের রাস্তাগুলো অধিকাংশই এমনিতেই সব সময় ব্যস্ত থাকে। এরমধ্যে এসব দোকান-পাটের কারণে তাতে আরও বেশী চাপ পড়ে। ফলে যানজট স্থায়ী রূপ লাভ করে। ভোগান্তির শিকার হন শহরবাসী ও পথচারীরা।
এভাবে মানুষকে কষ্টে ফেলে ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা করা জায়েজ নয়। কেননা তা সর্বসাধারণের চলাচলের রাস্তা কুক্ষিগত করে তাদের হক নষ্ট করা এবং তাদেরকে কষ্ট দেয়ার শামিল।। যেমন নিম্নোক্ত হাদিস সমূহ থেকে প্রস্ফুটিত হয়:
◍ ভূমি আত্মসাৎ করার ভয়াবহ শাস্তি:
সালিম রা. এর পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ أَخَذَ شَيْئًا مِنْ الأَرْضِ بِغَيْرِ حَقِّهِ خُسِفَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى سَبْعِ أَرَضِيْنَ
“যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো ভূমির সামান্যতম অংশও আত্মসাৎ করবে, কিয়ামতের দিন সাত তবক জমিনের নীচে তাকে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে।” [সহিহ বুখারি]
◍ রাস্তার অন্যতম একটি হক হল, পথিককে কষ্ট না দেয়া:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তোমরা রাস্তার হক প্রদান করো।” সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন, রাস্তার হক কী? তিনি বললেন:
غضُّ البصرِ، وكفُّ الأذى, وردُّ السلامِ ، والأمرُ بالمعروفِ ، والنهي عن المنكرِ
ক. চোখ নিচু রাখা।
খ. কষ্ট না দেয়া।
গ. সালামের উত্তর দেয়া।
ঘ. ভালো কাজের আদেশ দেয়া
ঙ. এবং মন্দ কাজে নিষেধ করা। (বুখারি/৬২২৯ ও মুসলিম/২১২১, দুরার ওয়েব সাইট)
◍ রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা ঈমানের সর্বনিম্ন শাখা:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“الإيمان بضعٌ وسبعون شعبة، فأفضلها قول: لا إله إلا الله، وأدناها: إماطة الأذى عن الطريق، والحياء شعبة من الإيمان”.
“ঈমানের শাখা সত্তরের অধিক, সর্বোত্তম শাখা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া সত্য কনো উপাস্য নাই) বলা, আর সব চেয়ে ছোট শাখা হল, কষ্টদায়ক বস্তু রাস্তা থেকে সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জা ঈমানের অন্যতম শাখা।” [বুখারি ও মুসলিম]
সুতরাং যদি লোক চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে ফুটপাথে ব্যবসা করা হয় বা রাস্তা দখল করে সেখানে দোকানের মালামাল রাখা হয় কিংবা রাস্তার উপর দোকানঘর উঠানো হয় তাহলে তা হারাম। কিন্তু যদি ফুটপাথ প্রশস্ত হয় এবং মানুষ অনায়াসে চলাচল করতে পারে তাহলে ইনশাআল্লাহ কোনও সমস্যা নাই। সম্মানিত ফকিহগণ এ মতামত ব্যক্ত করেছেন।
ويجوز الارتفاق بالقعود في الواسع من ذلك للبيع والشراء ، على وجه لا يضيق على أحد ، ولا يُضِر بالمارة ؛ لاتفاق أهل الأمصار في جميع الأعصار على إقرار الناس على ذلك ، من غير إنكار ، ولأنه ارتفاق مباح من غير إضرار ، فلم يمنع منه كالاجتياز “انتهى من ” المغني ” (8 / 16
তবে যদি বিশেষ পরিস্থিতিতে মানুষের আর্থিক সঙ্কট বা দরিদ্রতা বিবেচনায় ফুটপাতে ছোট ছোট ব্যবসায়ীদেরকে ব্যবসা করার সরকারী অনুমোদন দেয়া হয় এবং রাস্তা চলাচলে কিছুটা কষ্ট হওয়ার সত্ত্বেও বৃহত্তর স্বার্থে সাধারণ জনগণও বিষয়টিকে সহজভাবেই গ্রহণ করে নেয় তাহলে ইনশাআল্লাহ সমস্যা নাই।
এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদেরকে সতর্ক হতে হবে, যথাসম্ভব মানুষের চলাচলের পথকে নির্বিঘ্ন রাখার এবং নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে সুশৃঙ্খলতার সাথে দোকান দেয়ার। আইন লঙ্ঘন করে ইচ্ছামত যত্রতত্র দোকান খুলে রাস্তা আটকিয়ে মানুষকে কষ্ট দেয়া যাবে না।
◈ ২য়ত: ব্যবসার লাইসেন্স গ্রহণ:
দেশের আইন অনুযায়ী, যে কোনও ব্যবসা করতে হলে আগে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয়। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করা আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ। ১৯৮৬ সালের মিউনিসিপাল কর্পোরেশন ট্যাক্সেশন বিধিমালার ৪৪(১) বিধি অনুসারে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাইলে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। বলতে গেলে সব ব্যবসা ও স্বাধীন পেশার জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয়। এমনকি ফুটপাতে বসে যিনি ফল কিংবা টঙ এর দোকানে চা বিক্রি করবেন তারও লাইসেন্স দরকার। তাই যেই ব্যবসাই করুন না কেন ট্রেড লাইসেন্স অবশ্যই করতে হবে। (sourse: bdlive24)
উপরোক্ত শর্তসাপেক্ষে রাস্তার দুপাশের ফুটপাতগুলোতে শরিয়তের ব্যবসা সংক্রান্ত বিধানাবলী অনুসরণ করে হালাল ও বৈধ দ্রব্যাদি ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েজ আছে ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহু আলাম।
উত্তর প্রদান:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।