প্রশ্ন: প্রিয়জনের নামে বই উৎসর্গ [Dedication] করার বিধান কি?
উত্তর:
অনেক লেখক তাদের বইয়ের শুরুতে লিখে যে, “এই বইটি উৎসর্গ করা হল, অমুকের করকমলে বা অমুকের উদ্দেশ্যে…”। কেউ উৎসর্গ করে পিতা-মাতার উদ্দেশ্যে, কেউ কোনো বিখ্যাত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে, কেউ তার স্ত্রী বা প্রিয়জনের উদ্দেশ্যে আবার কেউ বা তার আদরের সন্তানদের উদ্দেশ্যে। এটাকে আরবিতে বলা হয়, الإهداء (আল ইহদা)। অর্থ: হাদিয়া/উপহার প্রদান।
এ পদ্ধতিটি পূর্বে যুগের মুসলিম লেখকদের মাঝে দেখা না গেলেও আধুনিক যুগের অনেক লেখককেই এমনিট করতে দেখা যায়। চাই সে ইসলামি লেখক হোক অথবা সাধারণ লেখক হোক।
আধুনিক যুগের লেখকগণ একাধিক উদ্দেশ্য এমনটি করে থাকে। কারও উদ্দেশ্য থাকে তার প্রিয়জনকে খুশি করা। কারও উদ্দেশ্য থাকে বিশেষ কোনও ব্যক্তির দৃষ্টি আকর্ষণ বা সুদৃষ্টি লাভ করা। আবার কারও উদ্দেশ্য থাকে, তার মৃত বাবা, মা, শিক্ষক, গুরুজন অথবা অন্য কোনও প্রিয়জনের উদ্দেশ্যে এর সওয়াব পৌঁছানো (ঈসালে সওয়াব/সওয়াব রেসানি) করা।
এ বিষয়ে নিম্নে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা ও এ ইসলামের বিধান আলোচনা করা হল:
যারা তাদের বইকে কারো নামে উৎসর্গ করে তাদের উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে তার বিধান প্রযোজ্য হবে। নিম্নে এর তিনটি রূপ ও সেগুলোর বিধান উল্লেখ করা হল:
◈ ১) যদি দ্বীন বিষয়ক কোন বই কে লেখক তার মৃত মা-বাবা, শিক্ষক অথবা অন্য কাউকে উদ্দেশ্য করে উৎসর্গ করে আর এর দ্বারা তার উদ্দেশ্য হয় যে, এর সওয়াব যেন সে ব্যক্তি কবরে থেকে লাভ করে তাহলে তার শরিয়ত সম্মত নয়। এটা মূলত বেদাতি ”ইসালে সওয়াব’ এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং তা নাজায়েজ।
◈ ২. আর যদি কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তি, নেতা, মন্ত্রী, রাষ্ট্রপ্রধান ইত্যাদি ব্যক্তির নামে উৎসর্গ করা দ্বারা উদ্দেশ্য হয় তার সুদৃষ্টি অর্জন বা কিছু দুনিয়াবি স্বার্থ হাসিল তাহলেও তা অনুচিত। এইভাবে চাটুকারিতার মাধ্যমে টাকা পয়সা বা দুনিয়াবি স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করা কোনো ব্যক্তিত্ববান ব্যক্তির জন্য উচিত নয়। বিশেষ করে কোন দীনী কাজকে এই উপলক্ষ বানানো খুবই গর্হিত অ পছন্দনীয় কাজ।
◈ ৩. কিন্তু যদি লেখক এর উদ্দেশ্য হয়, তার কোন প্রিয় বা শ্রদ্ধা ভাজন ব্যক্তির প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ তাহলেও তা অনুচিত। কারণ এই পদ্ধতিটি মূলত অমুসলিমদের থেকে এসেছে। আমাদের সালাফ বা পূর্বসূরিগণ কখনো এমনটি করেনি। সুতরাং এটি অমুসলিমদের সংস্কৃতি অনুসরণের নামান্তর।
❑ সঠিক পদ্ধতি:
কেউ যদি বইয়ের মাধ্যমে বিশেষ কারো প্রতি ভালোবাসা বা সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করতে চায় তাহলে বইয়ের ভূমিকা বা অন্য কোথাও উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি স্পষ্ট ভাবে তার ভালোবাসার কথা প্রকাশ করতে পারে বা তার জন্য বিশেষভাবে দোয়া করতে পারে। কিন্তু উৎসর্গ করার এই পদ্ধতিটি কোন ইসলামী সংস্কৃতি নয়। বরং তা এসেছে পাশ্চাত্য বা অমুসলিমদের সংস্কৃতি থেকে। মুসলিমদের জন্য এই পদ্ধতি পরিহার করাই অপরিহার্য।
আর যে সকল বই এমন উৎসর্গ করার বিষয়টি আছে পাঠকদের জন্য তা পড়া অবৈধ নয় যদি বইয়ের বিষয়বস্তু কোরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক বা মানুষের জন্য উপকারী হয়। কারণ পাঠক বইয়ে থাকা উপকারী জ্ঞান অর্জন করবে। আর উৎসর্গ করার দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ লেখক এর উপর বর্তাবে; পাঠকের উপরে নয়। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬◆◯◆▬▬▬
লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।