পানাহারের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করতে ভুলে গেলে করণীয় এবং তা মনে রাখার উপায়
▬▬▬❖◯❖▬▬▬
প্রশ্ন: আমি খাওয়ার সময় বেশিরভাগ ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে যাই। ১/২ লোকমা খাওয়ার পরে আমার মনে হয় যে, আমি `বিসমিল্লাহ’ বলিনি। তখন আমি তা বলে নেই। এতে কি আমার বিসমিল্লাহ বলাটা কবুল হবে?
আর আমি কী করলে খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলাটা মনে রাখতে পারব?
উত্তর:
➤ পানাহারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে খাওয়া শেষ করার পূর্বে যখনই মনে পড়বে তৎক্ষণাৎ বলবেন, “বিসমিল্লাহি ফি আওয়ালিহি ওয়া আখিরিহি” অথবা “বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু।”
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ طَعَاماً فَلْيَقُلْ بِسْمِ اللَّهِ، فَإِنْ نَسِيَ فِي أَوَّلِهِ فَلْيَقُلْ بسمِ اللَّهِ فِي أَوَّلِهِ وَآخِرِهِ
“তোমাদের কেউ যখন খাওয়া শুরু করে সে যেন বলে, বিসমিল্লাহ (অর্থ: নামে শুরু করছি) আর যদি, শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে যায় তাহলে সে যেনো বলে: “বিসমিল্লাহি ফি আওয়ালিহি ওয়া আখিরিহি” (অর্থ: শুরুতে ও শেষে আল্লাহর নামে)
(হিসনুল মুসলিম ২২৬ পৃষ্ঠা, হাদীসটি নেওয়া হয়েছে সুনানে আবু দাউদ থেকে)
অন্য বর্ণনায় এসেছে:
بسم الله أَوَّلَه وآخرَه
বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু (অর্থ: শুরুতে ও শেষে আল্লাহর নামে)।
➤ এমনকি খাওয়া শেষ হওয়ার সাথে সাথে অথবা সামান্য একটু পরও যদি মনে পড়ে তাহলেও তা বলা জায়েয আছে।
কাশশাফুল কেনা’ গ্রন্থে এসেছে:
وظاهره ولو بعد فراغه من الأكل
“উক্ত হাদিসের বাহ্যিক অর্থ হল, খাবার শেষ করার পরও যদি তা স্বরণ হয় তাহলেও উক্ত দুআটি (বিসমিল্লাহি ফি আওয়ালিহি ওয়া আখিরিহি) পাঠ করা যাবে।” [কাশশাফুল কেনা ৫/১৭৩]
নিহায়াতুল মুহতাজ গ্রন্থে বলা হয়েছে:
لا يأتي بها ( أي التسمية ) بعد فراغ وضوئه ، بخلاف الأكل فإنه يأتي بها بعده
“(ওজুর শুরুতে বলতে ভুলে গেলে) শেষ করার পর তা (বিসমিল্লাহ) বলবে না। কিন্তু খাবার ব্যাপারটি ব্যতিক্রম। এ ক্ষেত্রে শেষ করার পর হলেও বিসমিল্লাহি (তথা বিসমিল্লাহি ফি আওয়ালিহি ওয়া আখিরিহি) বলবে। [নিহায়াতুল মুহতাজ ১/১৮৪]
◯ কী করলে খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে মনে থাকবে?
◆ ১) খাবার সামনে এলেই আল্লাহর এই নিয়ামতের কথা স্বরণ করা এবং তারপর আল্লাহর নামে খাওয়া শুরু করা।
◆ ২) ‘বিসমিল্লাহ’ বলাকে নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করা। কিছু দিন চেষ্টা করলে পরবর্তীতে আর ভুল হবে না ইনশাআল্লাহ। তারপরও ভুল হলে বিকল্প দুআ পড়ে নিবেন।
◆ ৩) যেখোনে খাবার খান সেখানে চোখে পড়ার মত জায়গায় খাবার শুরু ও শেষ করার দুআ লিখে ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। তাহলে সে দিকে চোখ পড়লেই স্বরণ হয়ে যাবে।
◆ ৪) প্রতিবার খাওয়া বা পান করার শুরুতে একটু আওয়াজ করে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করার চেষ্টা করবেন। তাহলে এভাবে নিজের উচ্চারণ নিজের কানে শুনতে শুনতে মন-মস্তিষ্কে তার প্রভাব পড়বে। ফলে তা স্বরণ রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ। (পরবর্তীতে নীরবে পাঠ করবেন)।
◆ ৫) স্ত্রী ও বাচ্চাদেরকেও খাওয়ার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে অভ্যস্ত করবেন এবং তারাও যেন একটু আওয়াজ করে বলে।
◆ ৬) পরিবারে লোকজন একসাথে খেতে বসলে যার বিসমিল্লাহ বলতে মনে থাকে সে খাওয়ার শুরুতে অন্যদেরকে স্বরণ করিয়ে দিবে। এ জন্য আগে থেকে বিষয়টি তাদের কাছে বলে রাখতে হবে।
এভাবে চর্চা করলে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এটি আপনার নিজের এবং পরিবারের সকলের অভ্যাসে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬❖◯❖▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব।