ইসলাম দয়া ও মমতার ধর্ম। যে কারণে ইসলামে পশুর প্রতিও দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন: হাদিসে এসেছে,
▪ সাহাবি শাদ্দাদ ইবনে আউস রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ الْإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ، فَإِذَا قَتَلْتُمْ فَأَحْسِنُوا الْقِتْلَةَ، وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأَحْسِنُوا الذَّبْحَ، وَلْيُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهُ، فَلْيُرِحْ ذَبِيحَتَهُ ِ
“আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ে সুন্দর ও দয়া সুলভ আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব, তোমরা যখন হত্যা করবে তখন সুন্দরভাবে করবে আর যখন জবেহ করবে তখনও তা সুন্দর ভাবে করবে। তোমাদের কেউ (জবেহ করতে চাইলে) যেন ছুরি ধারালো করে নেয় এবং জবাইয়ের পশুটিকে প্রশান্তি দেয়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১৯৫৫)
▪ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি একটি ছাগল জবাই করার জন্য মাটিতে শুইয়ে ছুরি ধার করতে লাগল। তখন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ধমক দিয়ে বললেন,
أتريدُ أن تُميتَها موتاتٍ هلَّا حَدَدْتَ شَفْرَتكَ قبلَ أنْ تُضجِعَها
“তুমি কি একে কয়েকবার মৃত্যু দিতে চাও? তাকে মাটিতে শোয়ানোর আগে কেন তোমার ছুরি ধার দিলে না!”
[মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস : ৭৫৬৩, সহিহ]
◈ পশু জবেহ করা সঠিক পদ্ধতি:
🌀 ১. আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রহঃ. বলেন: “(গরু, ছাগল, দুম্বা ইত্যাদি পশু) জবেহ করার সময় ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে পশুর খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং গলদেশের দু পার্শ্বস্থ দুটি মোটা রগ কর্তন করা উত্তম। তবে যদি কেবল খাদ্য ও শ্বাসনালী এবং এক পাশের একটা মোটা রগ কাটা হয় তাহলেও যথেষ্ট। এমনকি শুধু খাদ্য ও শ্বাসনালী কাটা হলেও যথেষ্ট। তবে উক্ত চারটা রগ কর্তন করা অধিক উত্তম।” (শাইখ বিন বায রহ. এর অফিসিয়াল ওয়েব সাইট)
ধারালো অস্ত্র দ্বারা এভাবে কর্তন করার পর পশুকে কিছুক্ষণ ধরে রাখলেই ভেতর থেকে রক্তগুলো বের হয়ে দ্রুতই নিস্তেজ হয়ে যাবে এবং প্রাণ ত্যাগ করবে।
🌀 ২. প্রাণ ত্যাগ করার পূর্বে পশুর অন্য কোনো অঙ্গ কেটে কষ্ট দেওয়া হারাম। যেমন: ঘাড় মটকানো, পায়ের রগ কাটা, চামড়া ছাড়ানো ইত্যাদি।
🌀 ৩. অনুরূপভাবে, দেহ আড়ষ্ট হয়ে এলে চামড়া ছাড়াতে শুরু করার পর যদি পুনরায় লাফিয়ে ওঠে, তাহলে প্রাণ ত্যাগ করার কাল পর্যন্ত আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। যেহেতু পশুকে কষ্ট দেয়া আদৌ বৈধ নয়।
🌀 ৪. পশু পালিয়ে যাওয়ার ভয় থাকলেও ঘাড় মটকানো যাবে না। বরং তার বদলে কিছুক্ষণ ধরে রাখা অথবা হাঁস-মুরগীকে ঝুড়ি ইত্যাদি দিয়ে চেপে রাখা যায়।
🌀 ৫. জবেহ করার সময় পশুর মাথা যাতে বিচ্ছিন্ন না হয় তার খেয়াল করা উচিত।কিন্তু যদি অসতর্কতা বশত: যদি মাথা কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তাহলেও হালাল হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।
তবে আল্লাহর নামে ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে প্রথমে বর্ণিত পদ্ধতির আলোকে জবেহ করার পর প্রাণ ত্যাগের পূর্বে যদি পশুর শরীরের কোথাও ছুরি ঢুকানো হয়, ছুরি দ্বারা গুঁতা দেয়া হয় বা আঘাত করা হয় তাহলে তাতে পশুটি হারাম হবে না। কিন্তু এভাবে করলে পশুটিকে কষ্ট দেয়ার কারণে গুনাহ হবে।
আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমীন।
🌀 ৬) পশুকে শুইয়ে জবেহ কারী কেবলা মুখি হয়ে এবং পশুর মাথাটা কেবলার দিকে একটু ঘুরিয়ে জবেহ করা উত্তম। তবে আবশ্যক নয়। অর্থাৎ কিবলা ছাড়া অন্য দিকে মুখ করে আল্লাহর নামে জবেহ করলেও তা হালাল হবে। (আল্লামা বিন বায. রহ.)
🌀 ৭) আল্লাহর নামে জবেহ করা:
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلاَ تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ
‘‘(জবেহ করার সময়) যে পশুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয় না, তোমরা তা ভক্ষণ কর না।” (সূরা আনআম: ২১)
🌀 ৮)জবেহ করার সময় ”বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার” বলে পশুর কাঁধের পার্শ্বে পা দ্বারা চেপে ধরে ধারালো অস্ত্র দ্বারা শক্তি দিয়ে গলায় ছুরি চালাবে।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عن أنس بن مالك -رضي الله عنه- قال: ضحى النبي صلى الله عليه وسلم بكبشين أملحين، ذبحهما بيده، وسمى وكبر، ووضع رجله على صفاحهما [رواه البخاري ومسلم] وفي لفظ البخاري أقرنين قبل أملحين.
আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে দুটি সাদা-কালো বর্ণের দুম্বা কুরবানি করেছেন।
(জবেহ করার সময়) তিনি ’বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার’ বলেছেন এবং পা দিয়ে সেগুলোর কাঁধের পার্শ্বদেশ চেপে রাখেন। (বুখারি: ৫৫৬৫, মুসলিম: ১৯৬৬)
বুখারিতে ‘সাদা-কালো’ শব্দের পূর্বে ‘শিং ওয়ালা’ কথাটি উল্লেখ আছে।
উল্লেখ্য যে, কোন মুসলিম জবেহ করার সময় অসাবধানতা বশত: মুখে বিসমিল্লাহ-আল্লাহু আকবার উচ্চারণ করতে ভুলে গেলে উক্ত জবেহকৃত প্রাণী হারাম হবে না। কেননা, মুসলিমেরর অন্তরে আল্লাহর নাম রয়েছে। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাব তা পরিত্যাগ করা বৈধ নয়।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿✿✿▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।।