নখ ও চুল মাটিতে পুঁতে ফেলা উত্তম

প্রশ্ন: চুল আঁচড়ালে চিরুনির সাথে যে চুল ছিঁড়ে আসে তা এদিক-সেদিক না ফেলে আমি পলিথিন ব্যাগে রাখি। প্রশ্ন হল, কিছু চুল জমা হয়ে গেলে তা ডাস্টবিন বা ময়লা-আবর্জনা রাখার জায়গায় ফেললে কি পাপ হবে?

উত্তর:

মাথার চুল, নখ ইত্যাদি মাটির নিচে পুঁতে ফেলা অধিক উত্তম। তবে জরুরি নয়। ইবনে উমর রা. সহ একাধিক সাহাবির আমল থেকে পুঁতে ফেলার প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু এ বিষয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কোন সহিহ হাদিস আসে নি। দু একটা হাদিস পাওয়া গেলেও সনদগতভাবে সেগুলো দুর্বল।

◍ ইমাম বাইহাকি শুয়াবুল ঈমান কিতাবে বলেন,
قد روي حديث دفن الشعر والأظفار من أوجه ، كلُّها ضعيفة” نصب الراية في تخريج أحاديث الهداية ” (1/189)
“নখ ও চুল মাটিতে পুঁতে ফেলা সম্পর্কে একটি হাদিস একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে কিন্তু সবগুলো সূত্র দুর্বল।” [নাসবুর রায়াহ ফি তাখরিজি আহাদিসিল হিদায়াহ ১/১৮৯]

◍ ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহঃ বলেন,
يَدفن الشعر والأظفار ، وإن لم يفعل : لم نَرَ به بأساً
“চুল ও নখ মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে। তবে না পুঁতলেও আমরা তাকে কোন সমস্যা মনে করি না।” [খাল্লাল আত তরাজ্জুল কিতাবে এটি বর্ণনা করেছেন, পৃষ্ঠা নং ১৯]

◍ আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমিন রহ. বলেন,

”আহলুল ইলমগণ উল্লেখ করেছেন যে, চুল ও নখ পুঁতে ফেলা অধিক উত্তম। এ মর্মে কিছু সাহাবি থেকে আসার (সাহাবিদের মতামত ও কর্ম) পাওয়া যায়। তবে তা প্রকাশ্যে বাইরে থাকার জন্য বা কোন জায়গায় ছুঁড়ে ফেললে গুনাহ হবে এমনটি নয়।” [গ্রন্থ: মাজমু ফাতাওয়া শাইখ উসাইমিন, ১১ তম খণ্ড, প্রশ্ন নং ৬০]

❒ নখ-চুল ইত্যাদি বাইরে ফেলার কিছু ক্ষতিকর দিক:

◈ ১. এসব জিনিস দাফন না করলে এগুলোর অপব্যবহারও হতে পারে। অনেক সময় এগুলো যাদুকরদের হাতে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ তারা মাথার চুল, নখ ইত্যাদি দ্বারা যাদু করে। তাই সতর্কতার স্বার্থে গর্ত করে মাটির নিচে পুঁতে ফেলাই অধিক নিরাপদ।

◈ ২. এগুলো মাধ্যমে রোগ-জীবাণুও ছড়াতে পারে। যেমন: কোনো ব্যক্তি যদি তার কেটে ফেলা চুল সঠিকভাবে দাফন না করে, তাহলে তা বাতাসে উড়ে খাবারে বা পানিতে মিশে যেতে পারে। ফলে তার সঙ্গে লেগে থাকা জীবাণু পেটে গিয়ে মানুষ অসুস্থ হয়ে যেতে পারে।

◈ ৩. অনেকে আবার কেটে রাখা চুল বিক্রি করে দেন, যা শরিয়তে নিষিদ্ধ। কারণ মানব অঙ্গ বিক্রি করা শরিয়তে জায়েজ নেই। সাধারণত এই চুলগুলো বিদেশে বিক্রি হয়ে যায়। এগুলো দিয়ে সাধারণত পরচুলা, এক্সটেনশনে পরিণত করা হয়। উন্নত বিশ্বে এসবের অনেক দাম। ২০১৭ সালে চুল রপ্তানি থেকে মিয়ানমারের আয় ছিল ৬.২ মিলিয়ন ডলার। (ডি ডাব্লিউ)
[جاء في ” الموسوعة الفقهية ” ( 26 / 102 ) :
واتّفق الفقهاء على عدم جواز الانتفاع بشَعْر الآدميّ بيعاً واستعمالاً ؛ لأنّ الآدميّ مكرّم ، لقوله سبحانه وتعالى : ( وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ ) .
فلا يجوز أن يكون شيء من أجزائه مهاناً مبتذلاً ” انتهى]

◈ ৪. এর চেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, মানুষের চুল থেকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে বানানো হচ্ছে হীরা। চুল থেকে কার্বন কণাকে বের করে নিয়ে তা দিয়ে হীরা তৈরি হয়। এ পদ্ধতিতে হীরা তৈরির জন্য পশ্চিমা বিশ্বে অনেক কম্পানি গড়ে উঠেছে। তারা এ ব্যবসায় করে উপার্জন করছে কোটি কোটি ডলার। কিন্তু এটিও মানব অঙ্গের সম্মানহানি করে। কারণ মানব অঙ্গকে অলংকার হিসেবে ব্যবহার করাও তার সম্মানহানি করে।

◈ ৫. বর্তমান যুগে মানুষের চুল বা অন্যান্য অঙ্গ থেকে তার ডিএনএ ক্লোন করা সম্ভব। যার মাধ্যমে যে কাউকে বড় কোনো অপরাধে ফাঁসিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
(উৎস: ২, ৩, ৪ ও ৫ নং পয়েন্ট নেয়া হয়েছে কালের কণ্ঠ ডট কম থেকে)

যাহোক, শহরে থাকার কারণে বা অন্য কোন কারণে এগুলো মাটিতে পোঁতা কষ্টসাধ্য বা অসম্ভব হলে পলিথিনে ভরে ভালো করে মুখ বেঁধে ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থানে ফেলে দিলেও কোন গুনাহ নেই ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।

Share: