প্রশ্ন: দান-সদকা করার ফজিলত কী? কাকে দান করা যায় এবং দানের সর্বোচ্চ পরিমাণ কত?▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর: নিম্নে এ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল:
▪ দান-সদকা করার ফজিলত:
▫ক) দান-সদকা করলে সম্পদ কমে না: আবু কাবশা আল আনমারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন যে,
مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ
“সদকা করলে কোন মানুষের সম্পদ কমে না।” [তিরমিযী, ইবনে মাজাহ]
▫ খ) দান সম্পদকে বৃদ্ধি করে: পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,
مَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
“যারা আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করে তার উদাহরণ হচ্ছে সেই বীজের মত যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। আর প্রতিটি শীষে একশতটি করে দানা থাকে। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা অতিরিক্ত দান করেন। আল্লাহ সুপ্রশস্ত সুবিজ্ঞ।” [সূরা বাকারা: ২৬১]
রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ أَنْفَقَ نَفَقَةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَانَتْ لَهُ بِسَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ
“যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কোন কিছু ব্যয় করবে তাকে সাতশত গুণ ছওয়াব প্রদান করা হবে।” [আহমদ, সনদ সহিহ]
▪ কাদেরকে দান করব?
সাধারণভাবে গরিব-অসহায় মানুষকে, জন কল্যাণকর কাজে এবং দ্বীনের প্রয়োজনে সাহায্য করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। তবে নিজ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে গরিব, এতিম ও অসহায় মানুষের উদ্দেশ্যে দান করা অধিক উত্তম। এদেরকে দান করলে দু ধরণের সওয়াবের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন: রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
الصَّدَقَةُ عَلَى الْمِسْكِيْنِ صَدَقَةٌ وَهِىَ عَلَى ذِى الْقَرَابَةِ اثْنَتَانِ صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ
“দরিদ্রকে দান করলে কেবল সদকার সওয়াব মেলে। আর আত্মীয়কে দান করলে সদকার সওয়াব ও আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষার সওয়াব উভয়ই পাওয়া যায়’। (তিরমিযী, হা/৬৫৮ ও ইবনে মাজাহ, হা/১৮৪৪, সনদ সহীহ) এ মর্মে আরও একাধিক হাদিস রয়েছে।
▪ কী পরিমাণ দান করা যায়?
আল্লাহ তাআলা যাকে অর্থ-সম্পদ দান করেছেন সে যত বেশি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে গরিব-অসহায় মানুষ, জনকল্যাণকর কাজ অথবা দ্বীনের সেবায় অর্থ দান করবেন আল্লাহ তাআলা তাকে তত বেশি সওয়াব দান করবেন। কেউ সুস্থ-সবল ও স্বাভাবিক অবস্থায় চাইলে তার জীবন পরিচালনা এবং তার স্ত্রী-পরিবারের অত্যাবশ্যকীয় খরচ ছাড়া তার সমূদয় সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে দেওয়ার অধিকার রাখে। এতটা দান উচিত নয় যে, সব কিছু দান করার পর সে নিঃস্ব হয়ে যায়। তবে যদি সে শারীরিকভাবে অর্থ-উপার্জনে সক্ষম হয় তাহলে ভিন্ন কথা।
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি আল্লামা আব্দুল আজিজ বিন বায রাহ. কে প্রশ্ন করা হয় যে, প্রশ্ন: এক তৃতীয়াংশ সম্পদ দান করা উত্তম নাকি সম্পূর্ণ সম্পদ?
তিনি বলেন,
لا بدّ أن يُبقي له ما ينفعه ولا يتصدّق به كله، مثلما قال ﷺ لكعبٍ: أمسك عليك بعض مالك فهو خيرٌ لك، فيتصدّق بما تيسَّر، ويُبقي ما يُعينه على طاعة الله، ويُنفق على أهله.
“যা তার উপকারে আসবে তা তাকে অবশ্যই রাখবে; সব সম্পদ দান করবে না, যেমনটি তিনি কাব রা. কে বলেছিলেন,
أَمْسِكْ عَلَيْكَ بَعْضَ مَالِكَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ
“তুমি তোমার মালের কিছু অংশ রেখে দাও; তা তোমার জন্য উত্তম হবে।”
[সুনানে নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), অধ্যায়: ৩৫/ মানত ও কসম, পরিচ্ছেদ: ৩৬. মানত হিসেবে হাদিয়া দেওয়া]
অত:এব যথাটা সম্ভব দান করবে এবং এতটুকু রেখে দিবে যা দ্বারা সে আল্লাহর আনুগত্য করতে পারবে এবং তার পরিবারের জন্য ব্যয় করতে পারবে।”
তবে মৃত্যুর পূর্বক্ষণে মুমূর্ষু অবস্থায় দান (ওসিয়ত) করতে চাইলে ইসলাম একটি পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। আর তা হল, সর্বোচ্চ এক তৃতীয়াংশ। এর চেয়ে বেশি দান করা জায়েজ নাই। বরং এর চেয়ে কম হলেই ভালো। মুমূর্ষু অবস্থায় দানের ক্ষেত্রে কেউ যদি তার ধন-সম্পদ সব কিছু দানের ওসিয়ত করে যায় তাহলে তার মধ্যে কেবল এক তৃতীয়াংশ কার্যকর হবে। বাকিটা তার ওয়ারিশদের মাঝে যথানিয়মে বণ্টিত হবে।
🔸 সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বিদায় হজের সময় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ছিলাম। পথিমধ্যে আমি প্রচণ্ড রোগে আক্রান্ত হলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার সেবা-শুশ্রূষা করতে এলে আমি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রসূল, আমার অনেক সম্পত্তি। কিন্তু আমার ওয়ারিশ হওয়ার মত কেউ নাই একমাত্র মেয়ে ছাড়া। আমি আমার সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ ওসিয়ত করব? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, অর্ধেক? তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তবে তিন ভাগের একভাগ? তিনি বললেন, “তিন ভাগের একভাগ! তিন ভাগের একভাগই তো বেশি। সাদ, তোমার উত্তরাধিকারীদেরকে দরিদ্র অবস্থায় রেখে যাবে আর তারা মানুষের কাছে হাত পেতে ভিক্ষা করে বেড়াবে এর চেয়ে তাদেরকে সম্পদশালী করে রেখে যাওয়াই উত্তম।” [বুখারী ও মুসলিম]
– এক তৃতীয়াংশের চেয়ে কম করা উত্তম। ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
لَوْ غَضَّ النَّاسُ إِلَى الرُّبْعِ ، لأَنَّ رَسُولَ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم – قَالَ « الثُّلُثُ ، وَالثُّلُثُ كَثِيرٌ أَوْ كَبِيرٌ »
“মানুষ যদি (সম্পত্তি ওসিয়ত করার ক্ষেত্রে) এক তৃতীয়াংশ থেকে এক চতুর্থাংশে নেমে আসত তবে উত্তম হত। কেননা, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তিন ভাগের একভাগ! তিন ভাগের একভাগই তো বেশি।” [বুখারী ও মুসলিম]
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।