প্রশ্ন: ঘর-বাড়িতে Fire Extinguisher বা Fire exit রাখা জায়েজ আছে কি? কারণ জীবন-মরণ তো আল্লাহর হাতে। তাহলে আমাদের এগুলো কি আগে থেকেই রাখা উচিত?
উত্তর:
ঘর-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, অফিস-আদালত, হাসপাতাল, কোম্পানি ইত্যাদিতে Fire Extinguisher (অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র), Fire exit (অগ্নিকাণ্ডে জরুরি বহির্গমণ পথ) রাখা বা নগর প্রতিরক্ষার অংশ হিসেবে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা রাখায় শরিয়তে কোন বাধা নেই। কেননা বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়ার ক্ষয়-ক্ষতির চেয়ে বিপর্যয় থেকে বাঁচার অগ্রিম ব্যবস্থা গ্রহণ করা অধিক উত্তম-এ ব্যাপারে কোন জ্ঞানী ব্যক্তির দ্বিমত থাকার কথা নয়। ইংরেজিতে একটা কথা সুপ্রসিদ্ধ: Prevention is better then cure “প্রতিরোধ নিরাময় চেয়ে ভাল।”
প্রকৃতপক্ষে আমরা এই শিক্ষা পাই রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশনা ও জীবন থেকে।
নিম্নে এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মূল্যবান হাদিস এবং তাঁর জীবনী থেকে কয়েকটি নির্দেশনাগুলো তুলে ধরা হল:
◯◍ অগ্নিকাণ্ড ঘটার পূর্বেই এ বিষয়ে অগ্রীম সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ:
এ মর্মে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি হাদিস তুলে ধরা হল:
◈ যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ سَالِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تَتْرُكُوا النَّارَ فِي بُيُوتِكُمْ حِينَ تَنَامُونَ»
সালেম রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ “তোমরা ঘুমানোর পূর্বে তোমাদের ঘরে আগুন জ্বালিয়ে রেখো না।” (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আহমাদ, আবু আওয়া, নাসাঈ)
◈ আরেক হাদিসে এসেছেে:
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا تَتْرُكُوا النَّارَ فِي بُيُوتِكُمْ، فَإِنَّهَا عَدُوٌّ»
ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ “তোমাদের ঘরসমূহে আগুন জ্বলিয়ে রেখে দিও না। কেননা তা দুশমন।” আল (আদাবুল মুফরাদ, হা/ ১২৩৮-সহিহ)
◈ অন্য হাদিস এসেছে:
عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ: احْتَرَقَ بِالْمَدِينَةِ بَيْتٌ عَلَى أَهْلِهِ مِنَ اللَّيْلِ، فَحُدِّثَ بِذَلِكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «إِنَّ هَذِهِ النَّارَ عَدُوٌّ لَكُمْ، فَإِذَا نِمْتُمْ فَأَطْفِئُوهَا عَنْكُمْ»
আবু মুসা রা. থেকে বর্ণিত, মদিনার এক পরিবারের ঘরে রাতের বেলা আগুন লেগে তা পুড়ে গেলো। তাদের এই ঘটনা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট বর্ণনা করা হলে তিনি বলেনঃ “নিশ্চয় আগুন তোমাদের শত্রু। অতএব তোমরা যখন ঘুমাতে যাবে তখন তা নিভিয়ে দিব।” (বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ)
◯◍ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রিম প্রতিরক্ষা ও সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা:
🔸 হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ مَنْ تَصَبَّحَ سَبْعَ تَمَرَاتِ عَجْوَةٍ لَمْ يَضُرُّهُ ذَلِكَ الْيَوْمَ سَمٌّ وَلاَ سِحْرٌ ”
সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে সেদিন বিষ এবং যাদু তার কোন ক্ষতি করবে না।” (বুখারী ও মুসলিম)
এ হাদিসে তিনি অগ্রিম প্রতিরোধক মূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন।
🔸 তিনি সকল সকাল-সন্ধ্যা, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর এবং ঘুমানের পূর্বে বিভিন্ন দুআ ও জিকির শিক্ষা দিয়েছেন যেন মানুষ জিন শয়তান, যাদু, বদনজর ইত্যাদি থেকে রক্ষা পায়। এগুলোও অগ্রিম প্রতিরোধ মূলক উপায়।
🔸 নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধে যাওয়ার পূর্ব শিরস্ত্রাণ ও বর্ম দ্বারা পুরো শরীর আবৃত করেছেন যেন, শত্রুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করা সম্ভব হয়। এটি তার পূর্ব প্রস্তুতি ও অগ্রিম আত্মরক্ষা মূলক ব্যবস্থা।
এভাবে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী অধ্যয়ন করলে শত শত উদাহরণ খুঁজে পাবো অসুখ-বিসুখ, মহামারি, বড় দুর্ঘটনা ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তার অগ্রিম নির্দেশনা ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ।
আল্লাহু আলাম।
সুতরাং আমাদের কর্তব্য, অগ্নিকাণ্ড ঘটার পূর্বে এ বিষয়ে সবোর্চ্চ সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ, অগ্নি প্রতিরোধক সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা, সব ধরণের বিপর্যয়, মহামারি, রোগ-ব্যাধি, ভাইরাস ইত্যাদির প্রাদুর্ভাব ঘটার পূর্বেই আত্মরক্ষা মূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাশাপাশি মহান রবের দরবারে সব ধরণের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাওয়া এবং রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক শেখানো দুআ-জিকির পাঠ ও তাঁর নির্দেশনাগুলো মেনে চলা।
আল্লাহ আমাদেরকে সম্ভাব্য সকল প্রকার ক্ষয়-ক্ষতি, বিপর্যয়, মহামারী, ভাইরাস ইত্যাদি বালা-মুসিবত থেকে হেফাজত করুন। আমীন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ হেফাজত কারী।
▬▬▬❖◯❖▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব।