কবরের উপর নাম ফলক স্থাপন, গাছ লাগানো এবং কবরের চারপাশে খেজুরের কাঁচা ডাল পুঁতার বিধান

প্রশ্ন: কবরের উপর মৃত ব্যক্তির নাম, পরিচয়, ঠিকানা ইত্যাদি লেখা, কবরের নিকট গাছ লাগানো এবং কবরে দেয়ার পর তার চারপাশে খেজুরের কাঁচা ডাল পুঁতা সম্পর্কে ইসলামের বিধান কি দয়া করে জানাবেন।
উত্তর:
🔸 কবরের উপর লেখা:
কবরের সাথে সাইনবোর্ড লাগিয়ে তাতে মৃত ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, জন্ম-মৃত্যু তারিখ, কুরআনের আয়াত, হাদিস, কবিতার ছন্দ, দুআ, প্রশংসা বাণী, হে পথিক, একটু দাঁড়াও….এ জাতীয় কিছু লিখে রাখা বিদআত। কোন কবরে এমটি করা হলে কবরস্থান কর্তৃপক্ষ বা তার জীবিত উত্তরাধিকারী ব্যক্তিদের জন্য তা উঠিয়ে ফেলা আবশ্যক। কেননা হাদিসে কবরের উপর কোন কিছু লিখতে নিষেধ করা হয়েছে।যেমন,
نَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تُجَصَّصَ الْقُبُورُ وَأَنْ يُكْتَبَ عَلَيْهَا وَأَنْ يُبْنَى عَلَيْهَا وَأَنْ تُوطَأَ
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরে চুনা লাগাতে, লিখতে, তার উপর ঘর নির্মাণ করতে ও তা পদদলিত করতে নিষেধ করেছেন।” [তিরমিযী ১০৫২ (হাদিসের মান: সহীহ)]।
🔸 কবরের পাশে গাছ লাগানো:
গোরস্থানে মধ্যে কবরের আশেপাশে গাছ-গাছাড়ি লাগানোও ঠিক নয়। কেননা তাতে গাছের শিকড় ও ডালপালার কারণে নতুন কবর খনন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে। অথবা গাছ-পালা, কাঁটা, খোঁচ ইত্যাদির কারণে কবরস্থান জঙ্গলে পরিণত হয়ে যেতে পারে। কেননা, সেখানে সাপ, বিচ্ছু, শৃগাল বা অন্যান্য ক্ষতিকারক প্রাণী বসবাস করবে যা জিয়ারতকারীদের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। সে কারণে এমনি এমনি সেখানে গাছ-পালা, ঝোপ-জঙ্গল গজিয়ে উঠলে সেগুলো কেটে পরিষ্কার রাখা উচিৎ।
তবে আশেপাশে আরও কবর না থাকলে গাছ লাগানো যেতে পারে। চাই তা খেজুরের গাছ হোক বা অন্য কোন গাছ। তবে সে ক্ষেত্রে সে জায়গাটা পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, যেন তা জঙ্গলে পরিণত না হয়।
💠 কবরের চারপাশে খেজুরের ডাল পুঁতা
কবর দেয়ার পর আমাদের দেশে অনেক স্থানে কবরের চারপাশে খেজুরের চারটি কাঁচা ডাল পূতে দেয়ার যে রীতিটি চালু আছে তা ঠিক নয়। কারণ মুহাদ্দিসগণ বলেন, এটি কেবল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য খাস (নির্দিষ্ট)। কেননা, তিনি মাত্র একবারই এক সাহাবীর কবরে খেজুরের কাঁচা ডাল পুঁতেছিলেন। অন্য কারো কবরে এমনটি করেন নি। কারণ হয়ত তিনি ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে বিশেষভাবে ওহীর মাধ্যমে নির্দেশিত হয়ে এমনটি করেছিলেন। অন্যথায় তিনি অন্যান্য করবের ক্ষেত্রেও এমনটি করতেন। কারণ তিনি তাঁর জীবদ্দশায় অসংখ্য সাহাবীর দাফন প্রক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করেছিলেন।
আর সে কারণে সাহাবীগণও এটিকে সুন্নত হিসেবে গ্রহণ করেন নি। অর্থাৎ পরবর্তীতে কোন সাহাবী মৃত ব্যক্তির কবরে খেজুরের কাচা ডাল পুঁতেছেন বলে প্রমাণিত হয় নি। তাই মুহাক্কিক মুহাদ্দিসগণ কবরের আযাব লাঘব হওয়ার আশায় তাতে খেজুরের কাঁচা ডাল পুঁতাকে উম্মতের জন্য পালনীয় সুন্নত হিসেবে সমর্থন করেন নি।
🔸 কবরকে চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে বিশেষ চিহ্ন রাখা:
কারণে কবরকে চিহ্নিত রাখার প্রয়োজন হলে হলে তখন সেখানে ইট, পাথর বা এ জাতীয় বিশেষ কোন চিহ্ন রাখা জায়েয রয়েছে যাতে কবরটি চিনা যায়। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
وضع صخرة عند رأس عثمان بن مظعون وقال : أتعلم بها قبر أخي ، وأدفن إليه من مات من أهلي
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (তাঁর দুধভাই) উসমান বিন মাযঊন রা. এর কবরের মাথার নিকট একটি বড় পাথর রেখেছিলেন। তিনি বলেন, যেন আমি বুঝতে পারি যে, এটি আমার ভাইয়ের কবর আর আমার পরিবারের কেউ মারা গেলে তার নিকট দাফন দিতে পারি।” (সুনান আবু দাউদ-সহীহ)
তবে কোন কোন আলেম পরিচয়ের জন্য কবরের নিকট কেবল মৃত ব্যক্তির নামটি লিখার অনুমতি দিয়েছেন; অন্য কিছু নয়। হানাফি মাজহাব এবং শাফেয়ী মাজহাবের ইমাম সুবকী উক্ত মত ব্যক্ত করেছেন।
আল্লাহু আলাম।
✒✒✒✒✒✒
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।
Share: