❑ ঈদের প্রকৃত অর্থ কি?
শুধু দামী পোশাক, রঙ্গিন জামা, হরেক রকম সুস্বাদু খাবার আর নানা ধরণের আনন্দ-উৎসবের নাম ঈদ নয়। ঈদের উদ্দেশ্য কি তা আল্লাহ তা’আলা নিন্মোক্ত আয়াতের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন:
وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
“আর যেন তোমরা নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ করতে পার এবং তোমাদেরকে যে সুপথ দেখিয়েছেন, তার জন্যে তোমরা আল্লাহর মমত্ব প্রকাশ কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা হও।” [সূরা বাকারা: ১৮৫] এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, ঈদের উদ্দেশ্য হল দুটি:
১) আল্লাহর বড়ত্ব মমত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা।
২) আল্লাহ যে নেয়ামত দান করেছেন তার জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা।
❑ ঈদ সংক্রান্ত কতিপয় বিধান:
নিন্মে আমরা অতি সংক্ষেপে কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ঈদ সংক্রান্ত কতিপয় বিধান আলোচনা করার চেষ্টা করব যাতে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের নির্দেশিত পদ্ধতি অনুসারে আমরা আমাদের ঈদ উদযাপন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।
◉ ১. ঈদের দিন রোজা রাখা নিষেধ:
প্রখ্যাত সাহাবি আবু সাঈদ রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা এ দু দিন রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন।” [বুখারি, হাদিস নং ১৮৫৫]
◉ ২. ঈদের রাত থেকে তাকবির পাঠ করা:
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَاذْكُرُوا اللَّهَ فِي أَيَّامٍ مَعْدُودَاتٍ
“আর তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর নির্দিষ্ট দিন সমূহে।” [সূরা বাকারা: ২০৩]
ঈদুল ফিতরের ক্ষেত্রে রমজানের শেষ সূর্য ডোবার পর ঈদের রাত থেকে আরম্ভ করে ঈদের সালাত শুরু করা পর্যন্ত তাকবির পড়তে হয়। পুরুষগণ মসজিদ, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট তথা সর্বত্র উচ্চস্বরে তাকবির পাঠ করবে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন ঈদের আনন্দ প্রকাশ করা হয় অন্যদিকে আল্লাহর আনুগত্যের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। আর ঈদুল আজহার ক্ষেত্রে আরাফার দিনের ফজর থেকে শুরু করে তাশরিকের দিনের শেষ পর্যন্ত তথা জিলহজ মাসের তেরো তারিখের আসর পর্যন্ত তাকবির বলা।
তাকবির বলার পদ্ধতি:
الله أكبر، الله أكبر، لا إله إلا الله والله أكبر، الله أكبر ولله الحمد
“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।”
আল্লাহর মহত্মের ঘোষণা এবং তাঁর ইবাদত ও কৃতজ্ঞতার বর্হি:প্রকাশের উদ্দেশ্যে পুরুষদের জন্য মসজিদে, বাজারে, বাড়িতে ও পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পরে উচ্চ স্বরে তাকবির পাঠ করা সুন্নত।
◉ ৩. ঈদ উপলক্ষে পরস্পরে শুভেচ্ছা বিনিময় করা:
মুসলিমদের উদ্দেশ্যে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা উত্তম। কারণ সাহাবিগণ তা করতেন।
মুহাম্মদ বিন যিয়াদ আল আলহানী রহ. বলেন, আমি সাহাবি আবু উমামা আল বাহেলী রা. কে ঈদের দিন তার সাথীদের উদ্দেশ্যে বলতে দেখেছি: “তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম” (অর্থ: আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের (নেক কাজগুলো) কবুল করুন) [বায়হাকী (২/৩১৯)-সনদ হাসান।
তবে ঈদ মোবারক, ঈদ সাঈদ, ঈদের শুভেচ্ছা, কনগ্রাচুলেশন, কুল্লু আম ওয়া আনতুম বি খাইর ইত্যাদি যে সব শব্দ বা বাক্য দ্বারা মানুষ পরস্পরকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে আর মানুষও তাতে খুশি হয় সে শব্দ/বাক্য ব্যবহারে কোন আপত্তি নেই। কারণ ইসলামে দেশীয় সংস্কৃতি ও প্রচলিত রীতিনীতিকে নিন্দা করা হয় নি যদি তাতে শরিয়ত বিরোধী কিছু না থাকে।
◉ ৪. ভালো পোশাক ও ভালো খাবারের আয়োজন করা:
ঈদ উপলক্ষে যথাসম্ভব পরিবারের সদস্যদেরকে ভালো খাবার ও সুন্দর পোশাক দেয়ার ব্যবস্থা করা উত্তম। তবে অপচয় যাতে না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী। অনুরূপভাবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা-সাক্ষাত করা কর্তব্য। সেই সাথে প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর রাখতে হবে। দরিদ্রদের যথাসম্ভব সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে। যাতে ঈদের আনন্দ থেকে তারা বঞ্চিত না হয়।
◉ ৫. ঈদের সালাতের প্রতি যত্নশীল হওয়া:
ঈদুল ফিতরের সালাত বিলম্বে পড়া সুন্নত, যেন ঈদের দিন সকালবেলা ফিতরা বন্টণ করার পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে ঈদুল আজহার সালাত সূর্য উদিত হওয়ার প্রায় ১৫ মি. পর যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি পড়া সুন্নত।
◉ ৬. গোসল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:
ঈদের সালাতে যাওয়ার পূর্বে গোসল করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হবে। তারপর সুগন্ধি ব্যবহার করে ও সাধ্যানুযায়ী সবচেয়ে সুন্দর কাপড় পরিধান করে ঈদগাহ অভিমুখে যাত্রা করবে। তবে কাপড় পরিধান করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যেন পুরুষের কাপড় টাখনুর নিচে না যায়। কেননা, পুরুষের জন্য টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা হারাম। আর মহিলাকে তার সর্বাঙ্গ আবৃত করতে হবে এবং রূপ-সৌন্দর্য পরপুরুষের সামনে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করা আবশ্যক। কেননা মহান আল্লাহ বলেন,
وَلا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ الآية
“আর তারা (মহিলাগণ) তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না তাদের স্বামী, পিতা,স্বামীর পিতা…..ছাড়া অন্যের নিকট।” [সূরা নূর: ৩১]
মহিলাদের জন্য বাইরে যাওয়ার সময় আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করা হারাম।
◉ ৭. ঈদের মাঠে যাওয়ার আগে কোন কিছু খাওয়া সুন্নত:
ঈদুল ফিতরে ঈদের মাঠে যাওয়ার আগে কোন কিছু খাওয়া সুন্নত। আনাস (রা:) বলেন, “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতরের দিন কয়েকটা খেজুর না খেয়ে ঈদের মাঠে যেতেন না। আর তিনি তা বেজোড় সংখ্যায় খেতেন।” (বুখারি)। পক্ষান্তরে ঈদুল আজহায় তিনি ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে কিছুই খেতেন না। ঈদগাহ থেকে ফিরে এসে কুরবানির গোস্ত খেতেন।
◉ ৮. মহিলাদের ঈদগাহে যাওয়া:
মহিলাদেরকে সাথে নিয়ে ঈদের সালাত পড়তে যাওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন,
لِيَخْرُجْ الْعَوَاتِقُ ذَوَاتُ الْخُدُورِوَالْحُيَّضُ وَيَعْتَزِلُ الْحُيَّضُ الْمُصَلَّى وَلْيَشْهَدْنَ الْخَيْرَ وَدَعْوَةَ الْمُؤْمِنِينَ
“কর্তব্য হল, পর্দানশীন কুমারী মেয়েরা; এমন কি ঋতুমতী মহিলারাও ঈদগাহে যাবে। তবে ঋতুমতী মহিলাগণ নামাযের স্থান থেকে দূরে অবস্থান করে কল্যাণময় কাজ এবং মুমিনদের দুআতে শরিক হবে।” [বুখারি: হাদিস নং ৯২৭]
এ সুন্নত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এবং বাংলাদেশের কিছু কিছু এলাকায় আজো প্রচলিত আছে। সুতরাং যে সব এলাকায় তা চালু নেই সেসব স্থানের সচেতন আলেম সমাজ এবং নেতৃস্থানীয় মুসলমানদের কর্তব্য হল, আল্লাহর রাসূলের সুন্নতকে পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে মহিলাদেরকেও ঈদের এই আনন্দঘন পরিবেশে অংশ গ্রহণের সুযোগ প্রদানের জন্য এগিয়ে আসা। তবে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, পর্দা হীনতা, উচ্ছৃঙ্খলতা ইত্যাদি যাতে না ঘটে তার জন্য আগে থেকে সকলকে সচেতন ও সাবধান করা জরুরী। মহিলাগণ যখন বাড়ি থেকে বের হবে সর্বাঙ্গ কাপড় দ্বারা আবৃত করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ عَلَى قَوْمٍ لِيَجِدُوا مِنْ رِيحِهَا فَهِيَ زَانِيَةٌ
“যে মহিলা সুগন্ধি ব্যবহার করে অন্য মানুষের নিকট দিয়ে গমন করার ফলে তারা তার ঘ্রাণ পেল সে মহিলা ব্যভিচারিণী।” [নাসাঈ: হাদিস নং ৫০৩৬]
◉ ৯. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন করা:
পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন করা এবং ভিন্ন পথে ঈদগাহ থেকে ফিরে আসা সুন্নত। [বুখারি: হাদিস নং ৯৩৩]
◉ ১০. ঈদের সালাত আদায় করা:
ঈদ সংক্রান্ত কতিপয় বিধান:
● ক. ঈদের সালাতে আজান ও একামত নেই: জাবের ইবনে সামুরা (রা:) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে একবার নয়-দু বার নয় একাধিক বার ঈদের সালাত পড়েছি তাতে আজান ও একামত ছিল না।” [সহীহ মুসলিম: হাদিস নং ১৪৭০]
● খ. ঈদের মাঠে ঈদের সালাতের আগে বা পরে নফল সালাত পড়া শরিয়ত সম্মত নয়।
حديث ابن عباس أن النبي صلى الله عليه وسلم صلى يوم العيد ركعتين لم يصل قبلها ولابعدها))أخرجه البخاري(964)ومسلم(884)
ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দু রাকআত সালাত আদায় করেন। এর পূর্বে ও পরে কোন সালাত আদায় করেননি।” [বুখারি ও মুসলিম]
তবে মসজিদে পড়া হলে তাহিয়াতুল মসজিদ (দুখুলুল মসজিদ) এর দু রাকআত পড়া জায়েজ আছে। তবে ঈদের মাঠ থেকে বাড়িতে ফিরে এসে বাড়িতে দু রাকআত সালাত পড়া সুন্নত। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم – لَا يُصَلِّي قَبْلَ الْعِيدِ شَيْئًا, فَإِذَا رَجَعَ إِلَى مَنْزِلِهِ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ. رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ بِإِسْنَادٍ حَسَنٍ
رواه ابن ماجه (1293) ولا يظن ظان أن بين هذا الحديث وبين حديث ابن عباس السابق (491) تعارض فحديث ابن عباس خاص بالصلاة في المصلى، وبهذا الجمع قال غير واحد
আবু সাঈদ আল-খুদরি রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের সালাতের আগে কোন সালাত আদায় করতেন না। তবে তিনি তার বাড়িতে ফিরে আসার পর দু’ রাক’আত সালাত আদায় করতেন।” [ইবনে হাজার তার দিরায়াহ ১/২১৯ গ্রন্থে, ইমাম শাওকানী নাইলুল আওতার (৩/৩৭০) গ্রন্থে, আলবানী সহীহ ইবনে মাজাহ (১০৭৬), সহীহুল জামে (৪৮৫৯) গ্রন্থে, ইমাম সুয়ূতী জামেউস সগীর (৬৮৯৭) গ্রন্থে হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। ইমাম শাওকানী বলেন, এর সনদে আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন উকাইল রয়েছেন আর তার সম্পপর্কে সমালোচনা রয়েছে।]
● গ. সর্বপ্রথম ঈদের সালাত হবে তারপর খুতবা: আবু সাঈদ খুদরী (রা:) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের মাঠে গিয়ে সর্বপ্রথম নামাজ আদায় করতেন তারপর জনগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে ওয়াজ করতেন, কোন উপদেশ থাকলে উপদেশ দিতেন বা কোন নির্দেশ থাকলে নির্দেশ দিতেন। আর জনগণ নামাযের কাতারে বসে থাকতেন। কোথাও কোন বাহিনী প্রেরণের ইচ্ছা থাকলে তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতেন অথবা অন্য কোন নির্দেশ জারী করার ইচ্ছা করলে তা জারী করতেন। [সহীহ বুখারি, হাদিস নং ৯০৩]
● ঘ. ঈদের সালাতের রাকাত সংখ্যা: ঈদের সালাত দু রাকাত। [বুখারি, হাদিস নং ১৩৪১]
● ঙ. ঈদের সালাতে তাকবির সংখ্যা: তাকবিরে তাহরিমা ছাড়া প্রথম রাকাতে অতিরিক্ত সাত তাকবির এবং দ্বিতীয় রাকাতে অতিরিক্ত পাঁচ তাকবির।(মতান্তরে কববিরে তাহরিমা সহ ১ম রাকাতে মোট সাত তাকবির)
عن عَائِشَة أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُكَبِّرُ فِي الْفِطْرِ وَالْأَضْحَى فِي الْأُولَى سَبْعَ تَكْبِيرَاتٍ وَفِي الثَّانِيَةِ خَمْسًا…قَالَ سِوَى تَكْبِيرَتَيْ الرُّكُوعِ
“আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহার প্রথম রাকাতে সাত তাকবির এবং দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচ তাকবির দিতেন।” অন্য সনদে আছে, উল্লেখিত তাকবিরগুলো রুকুর তাকবির ছাড়া। [আবুদাঊদ হাদিস নং ৩৭০]
● চ. ঈদের সালাতে কেরাআত: প্রখ্যাত সাহাবি নুমান ইবনে বাশীর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই ঈদ ও জুমার নামাজে প্রথম রাকআতে ‘সাব্বিহিস্মা রাব্বিকাল আ’লা’ এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে ‘হাল আতাকা হাদীসুল গাশিয়াহ্’ পাঠ করতেন। [নাসাঈ, হাদিস নং ১৫৫০ সনদ সহীহ-আলবানি] সূরা ক্বাফ এবং সূরা ইক্বতারাবতিস্ সা’আহ্’ পড়ার কথাও হাদিস পাওয়া যায়। (নাসাঈ: হাদিস নং ১৫৪৯, সনদ সহীহ-আলবানি)
● ছ. ঈদের খুতবা শোনা: ঈদের খুতবা প্রসঙ্গে নবী সায়েব ইবনে ইয়াজিদ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ঈদের সালাতে উপস্থিত হলাম। তিনি ঈদের সালাত শেষ করার পর বললেন, আমরা এখন খুতবা দিব। সুতরাং
فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَجْلِسَ لِلْخُطْبَةِ فَلْيَجْلِسْ , وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَرْجِعَ فَلْيَرْجِعْ
“যে চলে যেতে চায় সে যেতে পারে আর যে (খুতবা শোনার জন্য) বসতে চায় সে বসতে পারে।” [নাসাঈ, অধ্যায়: দু ঈদ, অনুচ্ছেদ: দুই ঈদের খুতবা শুনা ইচ্ছাধীন বিষয়, হা/ ১৫৫৩, মুস্তাদরাক হাকিম, হা/১০৪৩, ইমাম হাকেম বলেন, হাদিসটি ইমাম বুখারি ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ তবে তারা তাদের কিতাবে বর্ণনা করেন নি। ইমাম যাহাবী ইমাম হাকিমের কথায় একমত পোষণ করেছেন। অনুরূপভাবে ইমাম আলবানিও হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহ আবু দাউদ, হা/১০৪৮, ইরওয়াউল গালীল, হা/৬২৯]
অর্থাৎ ঈদের খুতবা শুনার মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয়। তাই বলে, এটির প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করা উচিৎ নয়। কেননা, খুতবার মধ্যে মুসলিম জাতির কল্যাণের জন্য দুয়া করা হয়, ওয়ায-নসিহত করা হয়, বিভিন্ন বিষয়ে করণীয়-বর্জনীয় বিষয়ে দিক নির্দেশনা পেশ করা হয়।
❑ ঈদ ও সামাজিক জীবন:
ঈদের আনন্দ নির্মল, পবিত্র এবং অত্যন্ত মধুময়। ঈদ উপলক্ষে যখন নিজ নিজ গৃহে আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু বান্ধব একে অপরকে দাওয়াত দেয়, পরস্পরে শুভেচ্ছা বিনিময় করে, একে অপরকে উপহার সামগ্রী আদান-প্রদান করে তখন ঈদের আনন্দ আরও মধুময় হয়ে উঠে। সুদৃঢ় হয় সামাজিক বন্ধন। মনের মধ্যে জমে থাকা হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ ও তিক্ততা দূর হয়ে পারস্পারিক ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, সহমর্মিতা ও সম্মানবোধ জাগ্রত হয়। জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে বয়ে যায় শান্তির সুবাতাস যা প্রভাতের আলোর মতই স্বচ্ছ, নির্মল ও নিষ্কলুষ।
❑ ঈদ ও পাপাচারিতা:
ঈদের পবিত্রতা ম্লান হয়ে যায় যখন দেখা যায়, ঈদ উৎসব ও ঈদ মেলার নামে অশ্লীলতা-বেহায়াপনার মেলা বসে। তরুণ-তরুণীরা নানারকম আপত্তিকর পোষাকে চলাফেরা করে। একশ্রেণির উদ্ভট যুবক বাড়িতে, রাস্তার ধারে ও বিভিন্ন ক্লাবে বড় বড় ডেকসেটে অডিও সিডি চালু করে উচ্চ আওয়াজে গান বাজাতে থাকে। সরকারী-বেসরকারি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলোতে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ বিশেষ অশ্লীল ফিল্ম সম্প্রচার করে। সিনেমা হলগুলোতে নতুন নতুন ছবি জাঁকজমক ভাবে প্রদর্শিত হয়। মনে হয় এরা যেন এ ধরণের একটি সময়েরই প্রতীক্ষায় ছিল এত দিন!
দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনা করার পর যে একটা ঈমানি পরিবেশ তৈরি হয়ে ছিল, কুরবানি করার মাধ্যমে যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রতিযোগিতার লিপ্ত হয়েছিল মুসলিম সমাজ তারা কি এসব ক্রিয়া-কাণ্ডের মাধ্যমে তার চিহ্ন মুছে ফেলতে চায়? এসব অপসংস্কৃতিকে পরিত্যাগ করে আমরা যদি ইসলামী সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে ধারণ করতে পারি তাহলে আমাদের সার্বিক জীবন সুন্দর ও পবিত্রতার আলোক রশ্মিতে ভাস্বর হয়ে উঠবে। পরিশেষে, কামনা করি ঈদ আমাদের জীবনে রংধনুর মত রং ছড়িয়ে বার বার ফিরে আসুক। আর সে রঙ্গে রঙ্গিন হয়ে উঠুক আমাদের জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত। ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার হয়ে যাক সকল পাপ ও পঙ্কিলতা। আমিন।
▬▬▬▬▬▬▬✿◈✿▬▬▬▬▬▬▬
গ্রন্থনা: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদি আরব।