আল্লাহ আরশের উপরে রয়েছেন আবার তিনি নিচের আসমানেও নেমে আসেন সে সময় কি আরশ খালি হয়ে যায় এ বিষয়ে সঠিক আকিদা কী

প্রশ্ন: আল্লাহ তাআলা বলেন, “রহমান (দয়াময় আল্লাহ্‌) আরশে সমুন্নত।” [সূরা ত্ব-হা: ৫]। সেই সাথে এটাও সত্য যে, আল্লাহ তাআলা প্রতি শেষ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন, যা বহু সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
আমার প্রশ্ন হলো, আমার জিজ্ঞেস হলো, আল্লাহ আরশে আজিমে আছেন। তাহলে প্রতি রাতে তিনি প্রথম আসমানে নেমে আসেন। এ বিষয়ে আকিদা কী পোষণ করব? একটু বুঝিয়ে বলুন।
উত্তর:
✪ প্রথমত: প্রত্যেক মুসলিমের জন্য জানা জরুরি যে, কুরআন ও হাদিসে আল্লাহ তাআলার যে সকল সিফাত (গুণ ও‌ বৈশিষ্ট্য ) বর্ণিত হয়েছে সেগুলো যেভাবে এসেছে হুবহু সেভাবে বিশ্বাস করা অপরিহার্য। এগুলোর কোন ধরনের আকার-আকৃতি, সাদৃশ্য, ধরণ ও প্রকৃতি বর্ণনা করা যাবে না। সেগুলোকে রূপক অর্থে ব্যাখ্যা করাও যাবে না। বরং কুরআন ও হাদিসে যেভাবে এসেছে হুবহু সেভাবেই প্রকৃত অর্থে বিশ্বাস করতে হবে।

✪ দ্বিতীয়ত:

আল্লাহ তায়ালা সাত আসমানের উপরে সমুন্নত রয়েছেন-এটা যেমন কুরআন ও হাদিসের অসংখ্য নস দ্বারা প্রমাণিত তেমনি তিনি রাতের শেষ প্রহরে নিচের আসমানে নেমে আসেন সেটাও বহু নস দ্বারা প্রমাণিত।
অতএব উভয়টির প্রতি বিশ্বাস করা আবশ্যক। আরও বিশ্বাস করা আবশ্যক যে, আল্লাহ তাআলা সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান।

✪ তৃতীয়ত:

তিনি কীভাবে আরশের উপরে সমুন্নত, কীভাবে নিচের আসমানে নেমে আসেন,‌ এই সময় আরশ খালি হয়ে যায় কিনা, পৃথিবীর কোথাও রাতের শেষ প্রহর অথচ কোথাও দুপুর, কোথাও বিকেল, কোথাও বা রাতের প্রথম প্রহর তাহলে তিনি কোথায় কীভাবে নিচের আসমানে অবতরণ করেন ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করা জায়েজ নেই। এগুলো বিদআতি প্রশ্ন। কারণ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবিগণ কখনো এইসব প্রশ্ন করেননি। বরং তারা বিনা প্রশ্নে আল্লাহর এই সকল সিফাতের উপরে বিশ্বাস পোষণ করেছেন। সুতরাং তাদের মতই আমাদেরকে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী হতে হবে।

✪ চতুর্থত:

“আল্লাহ আরশ থেকে কীভাবে নিচের আসমানে নেমে আসেন?” এই জাতীয় প্রশ্ন সৃষ্টি হওয়ার কারণ হল, আমরা আল্লাহর সিফাতগুলোকে মানবিক বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা বিচার করি। কিন্তু এটি সঠিক পদ্ধতি নয়। আল্লাহর সিফাতকে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও বিবেক-বুদ্ধি দ্বারা অনুমান করা বা বিচার বিশ্লেষণ করা কখনো সম্ভব নয়। কেননা আল্লাহর সিফাত বা গুণ-বৈশিষ্ট্য গুলো অবশ্যই তাঁর কোনো সৃষ্টি জীবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। ‌ আমাদের কার্যক্রম এবং গুণ-বৈশিষ্ট্য খুবই সীমিত ও দুর্বল কিন্তু আল্লাহ তাআলার গুণ বৈশিষ্ট্য অসীম অপার, অতুলনীয় ও অপরিমেয়।

সুতরাং আল্লাহর আরশে উপরে অবস্থান করা এবং দুনিয়ার জমিনে অবতরণ করা অবশ্যই সত্য কিন্তু তার ধরণ-প্রকৃতি আল্লাহর জন্য যেমনটা শোভনীয় ঠিক তেমনই। আমাদের কোন কিছুর সাথে তার সাদৃশ্য বা মিল নেই।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া এই প্রসঙ্গে একটি উদাহরণ দিয়েছেন।‌ তা হলো, “আল্লাহ তাআলা নিচের আসমানে অবতরণ করলে আরশ খালি হয়ে যাওয়া আবশ্যক নয়। যেভাবে মানুষ ঘুমালে তার আত্মা আল্লাহর নিকটে চলে যায় কিন্তু তা মানুষের দেহ থেকে পরিপূর্ণভাবে আলাদা হয় না।”
আল্লাহু আলম।

♦️আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল♦️

Share: